৯ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

জনমানুষের নেতা শহীদ আহসানউল্লাহমাস্টার।

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ৯, ২০২৫, ০৭:০২ অপরাহ্ণ
জনমানুষের নেতা শহীদ আহসানউল্লাহমাস্টার।

Manual7 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি

ত্যাগ ছিল মানুষটির জীবনের ব্রত। দেশকে শুধু অকাতরে দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছুই চাননি। কখনো প্রতিদানের আশাও করেননি। জনমানুষের শিক্ষক শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার একজন দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে সম্মুখযুদ্ধ করেছেন। তিনি তাঁর দলে প্রধান ছিলেন। একবার পাকিস্তানি হানাদাররা কানাগলিতে চারদিক থেকে তাঁদের আটকে ফেলে। তখনো সাহস আর মনোবল হারাননি।

Manual5 Ad Code

শরীরের কাপড়চোপড় খুলে স্টেনগান নিয়ে পাশের খালে ঝাঁপ দেন। খাল পার হয়ে সুরক্ষিত জায়গায় গিয়ে হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। এই সম্মুখসমরে পরাজিত হয়ে হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। আরেক ঘটনায় হানাদার বাহিনী এই অকুতোভয় মানুষটিকে মাটিতে ফেলে দিয়ে বুকে বেয়নেট চার্জ করেছিল। ক্ষতবিক্ষত মানুষটি তখনো দমে যাননি। ডান হাত দিয়ে বেয়নেটটি সরিয়ে দেন।

দাঙ্গাবাজারে যখন হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছে, তখন তাদের দলসহ সশস্ত্রযুদ্ধের মাধ্যমে পাল্টা জবাব দেন তিনি। এরপর টঙ্গীর টিএসসিতে সশস্ত্রযুদ্ধে অংশ নেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বড় একটি যুদ্ধ করেছিলেন ছয়দানায়। মূল যুদ্ধটার সূত্রপাত ঘটেছিল কাশিমপুর থেকে। মিত্রবাহিনীর সঙ্গে সম্মিলিত এই যুদ্ধে তিনি ও তাঁর দল যুদ্ধ করেছেন আর শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে গ্রেনেড ছুঁড়েছেন। এভাবে হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছেন।

এমনিভাবে প্রতিটি যুদ্ধে তিনি সম্মুখ থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনুপ্রাণিত করেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। দেশপ্রেমিক এই মানুষটি শিক্ষা ও রাজনীতির এক অনন্য যোগসূত্র তৈরি করেছিলেন। শিক্ষা মানুষের জীবনকে বিকশিত করে। একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিকৃতি ছিলেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে শিক্ষক হিসেবে তিনি স্বাধীনতার চেতনাকে ছাত্রদের মানসপটে তুলে ধরেছেন একজন নিখুঁত শিল্পীর মতো।

Manual3 Ad Code

১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। তিনি ছিলেন শিক্ষকদের শিক্ষক। তিনি ছিলেন রাজনীতির শিক্ষক, রাজনীতিবিদদের শিক্ষক।

তাঁর রাজনীতির মূল বিষয় ছিল মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা। তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী দেশপ্রেমিক একজন নেতার প্রতিকৃতি। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি গাজীপুরের পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করেন। বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। এরপর ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদ আসনে নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালে গাজীপুর-২ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে অপকৌশলের মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে পরাজিত করা হলেও জনমানুষের অন্তরের নেতা শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জাতীয় সংসদে গাজীপুর-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের চেয়ারম্যান ছিলেন। জাপানের একটি ঘটনা তাঁর ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তাকে উদ্ভাসিত করে।

Manual2 Ad Code

জাপানি শ্রমিক নেতারা তাঁকে কিছু উপহার দিতে চাইলে তিনি তা আন্তরিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে জাপানের জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংরক্ষণের কথা বলেছিলেন, যা আজ জাপানে গেলে সবার চোখে পড়বে। এটা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর প্রকৃত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়ন, পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করার জন্য তিনি নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছেন। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে সেই মামলা লড়াইয়ের জন্য ও মামলা পরিচালনার জন্য তহবিল গঠনসহ শ্রমিকদের বিভিন্নমুখী কল্যাণকর কাজের সঙ্গে তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।

Manual3 Ad Code

মুক্তিযুদ্ধের লড়াইয়ে তিনি যেমন সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন, গণতন্ত্রের লড়াইয়েও তিনি ছিলেন সম্মুখযোদ্ধা। খুনিরা শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করেনি, তারা হত্যা করেছে স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী একজন নেতাকে। জন্ম নয় নভেম্বর উনিশশো পঞ্চাশ আর মৃত্যু সাত মে দুই হাজার চার। শ্রদ্ধাঞ্জলি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code