৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

দোয়ারাবাজার সীমান্তে ৯৭ লাখ টাকার ফসল রক্ষা বাধ প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

admin
প্রকাশিত মার্চ ২৩, ২০২৫, ০৮:১৭ অপরাহ্ণ
দোয়ারাবাজার সীমান্তে ৯৭ লাখ টাকার ফসল রক্ষা বাধ প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

Manual7 Ad Code

ক্রাইম রিপোর্টার :: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তে চিলাই নদীর পূর্বপাড় দুই কিলোমিটার ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে

বাঁধের গোড়া থেকেই মেশিন (একসেভেটর) দিয়ে মাটি কেটে নির্মাণ করা হয় বাঁধ। এতে বাঁধের দুই পাশ দুর্বল এবং মূল বাঁধের গোড়ার ক্ষতি বলে মনে করছেন কৃষকরা। স্থানীয়দের কোন বাঁধা-নিষেধ না মেনে বাঁধ নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিলে বাধের মাটি আনতে গিয়ে স্হানীয় ছালিক মিয়ার বাড়ির উটান থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে বাড়ির উটান পুকুর করা হয়েছে। হতদরিদ্র ছালিক মিয়ার মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন আমি গরিব মানুষ আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আমার বাড়ির উঠান থেকে মাটি কেটে পুকুর করা হয়েছে। আমাকে বাধের সভাপতি আনোয়ার ভূঁইয়া বলেন ঘন্টা প্রতি তিন হাজার টাকা দিলে পুকুর ভরিয়ে দিবেন। আমি গরীব মানুষ টাকা পাব কই।

Manual1 Ad Code

ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক এমদাদুল হক বলেন, বাধ নির্মাণ করতে গিয়ে আমার পুকুরের ৬০ টি গাছ কেটে ফেলেছে যার বাজার মূল্য প্রায় এক লাখ টাকা। সারি সারি গাছ কেটে রাস্তায় রাখা হয়েছে। টমেটো খেত, সবজি খেত নষ্ট করে জমি থেকে মাটি আনা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাধ ডিজাইনমতো নির্মাণ হয়নি। বাধের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। বাধের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে।

Manual6 Ad Code

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড এর অধীনে মোকামছড়া থেকে পেকপাড়া-আননপাড়া পর্যন্ত এলজিইডি’র দুই কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ হয় ৯৭ লাখ টাকা। কাজের শুরুতে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কাটাসহ প্রকল্প পরিকল্পনা মোতাবেক বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে না এমন অভিযোগে উঠে। এছাড়াও বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও প্রকল্প মনিটরিংবোর্ড টানানো হয়নি। হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড এর অধীনে ওই প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে খোদ সমিতির অনেকেরই প্রকল্পের বিষয়ে কোন কিছুই জানা নেই। স্থানীয় কৃষকদের অনেকেই জানিয়েছেন, কৃষকদের কল্যাণে যে দিক দিয়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা সে দিক দিয়ে হচ্ছে না। হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের সুবিধার্থে উপজেলা এলজিইডি অফিসের যোগসাজশে প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। এতে সাধারণ কৃষকদের তেমন কোন উপকারে আসবে না ওই বাঁধ।

হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির বর‍্যতমান কার্যকরী সদস্য, আব্দুল মন্নান, খলিলুর রহমান,সোনাবান বিবি,চানমিয়া, জামাল তালুকদার, প্রকল্পের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। সমিতির পদপদবীধারী কিছু সদস্যরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মনগড়া ভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় এলজিইডি অফিসেরও তেমন কোন তদারকি নেই। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে কারা আছে তাও আমাদের জানা নেই। এই বাঁধে কৃষকদের তেমন কোন উপকার হবে না।

Manual1 Ad Code

বর্তমান ইউপি সদস্য ও সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদির বলেছেন, বাঁধের গোড়া থেকে এসকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে পুকুর খনন করে ফেলা হচ্ছে। এতে কৃষকদের ফসলী জমি বিনষ্ট করে এলজিইডির পুরনো রাস্তায় মাটির প্রলেপ দিয়ে ৯৭ লাখ টাকার প্রকল্প ভাগবাটোয়ারা করে খাওয়ার ধান্দায় মরিয়া হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে যাতে কেউ কথা না বলে সে জন্য সমিতির সভাপতি আনোয়ার ভুঁইয়া ও তার প্রভাবশালী আত্মীয় স্বজনকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে রাখা হয়েছে। প্রকল্পের সভাপতি আনোয়ার ভূইয়ার কাছে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উনি সবকিছু অস্বীকার করেন।

Manual8 Ad Code

প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাবুল ডাক্তার বলেছেন, প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবেই হচ্ছে। দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বলেন সিনিয়র কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নেহের নিগার তনু বলেন এই বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি, তদন্ত সাপেক্ষে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code