৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

রংপুরের ডিসির কাছে জবাব চেয়েছে আদালত

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ৪, ২০২৫, ০৮:৩৬ অপরাহ্ণ
রংপুরের ডিসির কাছে জবাব চেয়েছে আদালত

Manual2 Ad Code

রংপুরের ডিসির কাছে জবাব চেয়েছে আদালত

Manual1 Ad Code

লোকমান ফারুক, রংপুর থেকে:- রংপুরে সোমবারের বিকেলে আদালত চত্বরের বাতাসে যেন টান টান উত্তেজনা। আইনজীবীদের মুখে মুখে একটাই খবর—’ডিসির কাছে জবাব চেয়েছে আদালত।’
রোববার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক কৃষ্ণ কান্ত রায় এই নির্দেশ দেন, প্রেসক্লাব ইস্যুতে আদালতের আদেশ ভঙ্গের অভিযোগে।

Manual3 Ad Code

এই আদেশের খবর প্রকাশ্যে আসতেই সোমবার বিকেলে আদালত প্রাঙ্গনে জড়ো হন প্রেসক্লাব মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম, মাহে আলম, হারুন-উর-রশিদসহ আরও কয়েকজন। তাদের কণ্ঠে ছিল ক্ষোভ, কিন্তু সেই ক্ষোভের ভেতরেই ছিল আইনের প্রতি গভীর আস্থা।

রংপুর প্রেসক্লাবের সদস্য অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত মামলায় আদালত পূর্বে নির্দেশ দিয়েছিল—বিচারাধীন অবস্থায় উভয়পক্ষ ও ক্লাবের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রেসক্লাবে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল সেই তালিকা তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন।

‘এটি আদালতের আদেশকে টয়লেট পেপারের টিস্যুর মতো ছুঁড়ে ফেলার সামিল,’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম। তাঁর অভিযোগ, ‘রংপুরের ডিসি ও তথাকথিত প্রেসক্লাব প্রশাসক রমিজ আলম আদালতের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখিয়েছেন। যেন তারা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় আদালতের ঊর্ধ্বে।’

এই বক্তব্যের মুহূর্তে উপস্থিত আইনজীবীদের চোখেমুখে স্পষ্ট ছিল হতাশা। একে কেউ বললেন ‘আইনের অপমান’, কেউ বললেন ‘প্রশাসনের উদ্ধত অহংকার’।

জোবাইদুল ইসলামের ভাষায়, ‘বর্তমান ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল অতীতেও বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছিলেন।’ তিনি দাবি করেন, ‘২০১৪ সালে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় ইউএনও থাকাকালে নির্বাচনে নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন।’ এই বক্তব্যের স্বপক্ষে তারা কিছু নথি আদালতে জমা দিয়েছেন বলেও জানান। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবহৃত শব্দচয়নও ছিল অস্বাভাবিক তীক্ষ্ণ। ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর,’ ‘আদালতের অবমাননাকারী,’—এমন শব্দে প্রতিপক্ষদের বর্ণনা দেন বক্তারা। তবে অন্য সূত্র বলছে, প্রেসক্লাবের পুরনো দ্বন্দ্ব ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই এই বিরোধের মূল উৎস।

Manual1 Ad Code

অ্যাডভোকেট মাহে আলম বলেন, ‘রংপুরের সর্বোচ্চ আদালতকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। আদালত নিষেধ করেছিল সদস্য অন্তর্ভুক্তি থেকে বিরত থাকতে, কিন্তু সেই আদেশ অমান্য করে সদস্য তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।’

অন্যদিকে, আইনজীবী অ্যাডভোকেট হারুন-উর-রশিদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকার রংপুর প্রেসক্লাবে হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রশাসন এখন ক্লাবের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে। এটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।’

প্রেসক্লাব কমিটির পক্ষে দায়ের করা মামলায় জেলা প্রশাসক ছাড়াও সমাজসেবা অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তাকে প্রতিপক্ষ করা হয়েছে। আদালত তাদের কাছেও ব্যাখ্যা চেয়েছেন—কেন আদালতের পূর্ব নির্দেশ অমান্য করা হলো।

আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রেসক্লাবের নিবন্ধন সংক্রান্ত কাগজপত্রে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও বিরোধ রয়েছে। একপক্ষের দাবি, ‘প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্টভাবে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে নিজেদের অনুগতদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিচ্ছে।’
অন্যপক্ষ বলছে, ‘পুরনো নেতৃত্ব ক্লাবকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো চালাচ্ছে, প্রশাসন কেবল স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে।’

সোমবার দিনের আলো ফিকে হয়ে আসছিল,আদালত চত্বর প্রায় ফাঁকা। কয়েকজন আইনজীবী দাঁড়িয়ে ছিলেন বারান্দায়। হাতে নথি, চোখে আশঙ্কা—আদালতের পরবর্তী নির্দেশ কবে আসবে, কেউ জানে না। শীতল বাতাসে ভেসে আসছিল এক আইনজীবীর কণ্ঠ—’আইনই যদি মানা না হয়, তবে ন্যায়বিচার কোথায় যাবে?’

Manual3 Ad Code

রংপুরের এই ঘটনাটি হয়তো কেবল একটি প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নয়—এ যেন প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সূক্ষ্ম টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি, যেখানে ন্যায়ের পাল্লা এখনো দুলছে অনিশ্চয়তার মাঝে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code