৯ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বিশ্বব্যাংকের ঋণের প্রকল্পে দুর্নীতির মহোৎসব

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ৮, ২০২৫, ০১:১২ অপরাহ্ণ
বিশ্বব্যাংকের ঋণের প্রকল্পে দুর্নীতির মহোৎসব

Manual7 Ad Code

বিশ্বব্যাংকের ঋণের প্রকল্পে দুর্নীতির মহোৎসব

রিপোর্ট পিআইডি: পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় নেওয়া গরিবের ল্যাট্রিন, গ্রামীণ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের নামে চলেছে দুর্নীতির মহোৎসব। আসছে ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত প্রকল্পের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হবে, কিন্তু কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৭ শতাংশ। যেসব কাজ হয়েছে, সেগুলোও দুর্নীতিতে সয়লাব।

বেশির ভাগ কাজেই দরপত্রের স্পেসিফিকেশন মানা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৮০ ভাগ পাবলিক টয়লেট ইতোমধ্যেই অব্যবহৃত, পরিত্যক্ত।

Manual4 Ad Code

অভিযোগ আছে-ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রকল্পের টাকা লোপাট করে দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন প্রকল্পটির একচ্ছত্র অধিপতি প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. তবিবুর রহমান তালুকদার।

খোদ সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন ও যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে প্রকল্পটিতে পুকুরচুরির তথ্য পাওয়া গেছে।

Manual4 Ad Code

সরেজমিন কোনো কোনো জেলায় পানির ছোট স্কিমের কাজ বন্ধ পাওয়া গেছে। পাবলিক টয়লেট ও কমিউনিটি ক্লিনিকের টয়লেট নির্মাণকাজ চলমান। ইতোমধ্যে কয়েকবার সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি। পরিদর্শনকৃত পানির ছোট ৪৭টি স্কিমের মধ্যে ৪টির (৯%) নির্মাণকাজে স্পেসিফিকেশন অনুসারে মাটির ৩ ফুট নিচে স্থাপন করা হয়েছে এবং ২১% এইচডিপিই পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৩টি (১১%) স্কিমের কাজ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হয়নি।

নির্মাণকাজের ত্রুটির কারণে ল্যান্ডিং স্টেশন ভেঙে গেছে এবং কলাম বাঁকা হয়েছে। পাবলিক টয়লেটে প্রবেশের জন্য ২ ধরনের র‌্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে র‌্যাম্পের গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়নি।

এ কারণে পাবলিক টয়লেটগুলো বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীবান্ধব হয়নি। পাবলিক টয়লেট ৪৭টির মধ্যে ৩৮টি (৮০ দশমিক ৮৫%) বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে না। কোনো কোনো টয়লেট বছরে মাত্র ২-৩ দিন ব্যবহার হলেও বাকি অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। প্রকল্পের ৩৬টি হাত ধোয়ার স্টেশনের মধ্যে ১১টি (৩০%) ভালো অবস্থায় থাকলেও সেগুলো ব্যবহার করা হয় না। বাকি ৭০% স্টেশনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, টাইলস ভাঙা, ফিটিংস নষ্ট এবং পানিতে অস্বাভাবিক আয়রনের উপস্থিতির কারণে সেগুলো অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পরিদর্শনকৃত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নির্মিত ১৯টি টয়লেটের মধ্যে ১৭টি (৮৯ দশমিক ৪৭%) ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ অবস্থার কারণ-পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর জন্য অর্থের জোগান না থাকা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব এবং ফিটিংস চুরির ভয়। পরিদর্শনকৃত ১২২টি (১০০%) ল্যাট্রিনই স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী স্থাপন করা হয়নি।

যেমন-রিংয়ের নিচে ৩ ইঞ্চি স্থানীয় বালি, বালির ওপর ৩ ইঞ্চি খোয়া এবং এর ওপর রিং স্থাপন; একইভাবে রিংয়ের বাইরের পাশে ৬ ইঞ্চি পুরো বালি দেওয়া হয়নি। ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া পানির বড় স্কিমগুলো জলাশয়, পুকুর ও ডোবা ভরাট করে করা হয়েছে, কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।

নজিরবিহীন এই দুর্নীতির কারিগর তবিবুর রহমানকেই নতুন করে শুরু হতে যাওয়া ১৮৮৯ কোটি টাকার স্যানিটেশন প্রকল্পের পিডি নিয়োগ করা হয়েছে। এ প্রকল্পও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নের কথা।

এ নিয়ে মঙ্গলবার যুগান্তরে ‘বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য; এখনো এত প্রিয় কেন তবিবুর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী যুগান্তরকে বলেন, ‘আইএমইডির এ ধরনের কোনো প্রতিবেদন আমার নজরে আসেনি। এটা দেখে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এ প্রতিবেদককে প্রতিবেদনটির কপি সরবরাহ করতেও বলেন তিনি।

প্রতিবেদনটি আইএমইডির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে জানালে তিনি বলেন, ‘এটা হয়তো আগে-পরে হয়েছে। অসুবিধা নেই। এটা আমরা দেখব। আর দুর্নীতির সঙ্গে যদি পিডির সংশ্লিষ্টতা থাকে, সে যদি খারাপ হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এতে অসুবিধা নেই।’

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই প্রকল্পের অর্থ লোপাটের একচ্ছত্র ‘সম্রাট’ প্রকল্প পরিচালক মো. তবিবুর রহমান তালুকদার।প্রকল্পের বিল ও ঠিকারদারকে দেওয়া চেক তার একক সইতে পাশ হয়ে যায়। এতে নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীদের কোনো করণীয় নেই। এই সুযোগে তিনি পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে নজিরবিহীন লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ আছে। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য তবিবুর অবৈধ টাকায় সিরাজগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে মায়ের নামে ছয়তলা আলিশান বাড়ি করেছেন। ধানমন্ডি ২৭-এ কিনেছেন ৫ হাজার স্কয়ার ফুটের বাণিজ্যিক ফ্লোর।

এছাড়া ধানমন্ডিতে দুটি ও ব্যাংককে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। দেশে রয়েছে একাধিক গাড়ি। অঢেল সম্পদের অনুষঙ্গ হিসাবে ব্যক্তি জীবনে নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অপকর্মেও জড়িয়েছেন। বিয়ে করেছেন ছয়টি। একাধিক স্ত্রীকে আলাদা বাড়িও করে দিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার এসব দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধানও করছে বলে জানা গেছে। তবে প্রভাব খাটিয়ে দুদককে তিনি ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ আছে।

Manual7 Ad Code

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. তবিবুর রহমান তালুকদার মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে আপনার সঙ্গে মোবাইলে কোনো কথা বলব না। কথা বলতে হলে সামনাসামনি আসবেন।’ তখনই সাক্ষাতের সময় চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার যখন সময় হবে তখন আপনাকে জানাব।’

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code