
আমার স্বাধীনতা
লেখক – আহসান হাবীব।
আমার খুব বেশি স্বাধীনতার দরকার নাই,
কদাচিৎ নিজের ঘরে কিংবা আড্ডায়।
আমাকে মদপান করতে দিও,
কথা দিচ্ছি আমি কারো কোন ক্ষতি করবো না।
হয়তো সামান্য একটু ইংরেজি বকবো বেশি বেশি হাসবো,
অকারণ এক আধটু গালিও দিতে পারি কাউকে।
কাউকে কবিতা লিখতে দিও,
কথা দিচ্ছি কবিতায় রাষ্ট্রকে নাড়বো না।
রাষ্ট্রের বদমাইশি দেখেও না দেখার ভান করবো,
শোষিতের পক্ষে একটুও রা কাড়বো না।
ফুল পাখি লতাপাতা বড়জোর শিশিরবিন্দু নিয়ে মেতে থাকবো,
এমনকি লাঙলের ফলা শব্দটিও উচ্চারণ করবো না।
আমায় নারী বন্ধুর সংগে ঘুরতে দিও,
ফুটপাথে চা খেতে দিও সিগ্রেট, যদি বারণ কর, খাবো না।
একই রিকশায় ঘুরতে দিও,
বুড়িগঙ্গায় হাওয়া খেতে যদি মন চায় খেতে দিও।
আর যদি ঘরে ফিরতে রাত হয়ে যায়,
পথে আটকে কোন জিজ্ঞাসাবাদ না করার স্বাধীনতাটুকু শুধু দিও।
আমার একটা বদভ্যাস আছে গান গাওয়ার,
তাও আবার রবীন্দ্রসংগীত গাইতে দিও।
সকাল বেলা ঘণ্টা দুয়েক রেয়াজ করার স্বাধীনতা দিলে,
কথা দিচ্ছি আমি তোমার আজীবন দাস হয়ে থাকবো।
হে, রাষ্ট্র প্লিজ আমাকে উপাসনালয়ে যেতে বাধ্য করিও না,
ওদিকে আমার মন নাই।
আমি যেন নিরীশ্বরবাদী হয়ে কাটিয়ে দিতে পারি বাকি জীবন,
শুধু এই স্বাধীনতাটুকু চাই আমি।
তোমার দুর্নীতি নিয়ে আধিপত্য নিয়ে গুম খুন নিয়ে টুঁ শব্দটিও করবো না,
কথা দিচ্ছি শুধু আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করিও না।
আমার স্বাধীনতার সীমা সামান্য,
আমি যেন নিরিবিলি হাঁটতে পারি চন্দ্রিমায়।
হ্রদের ঢেউ গুনতে পারি কৃষ্ণচূড়ার রঙের দিকে তাকিয়ে,
বিস্মিত হতে পারি এই ভাদ্রেও।
যেন কোকিলের ডাক শুনে কাঁদতে পারি,
আর একটা বিষয়ে স্বাধীনতা চাই।
আমাকে জোর করে মিথ্যা বলতে বোলো না,
শুধু সত্য বলার স্বাধীনতাটুকু দিও, হে রাষ্ট্র আমার!
Sharing is caring!