লোকমান ফারুক, রংপুর
রংপুরের তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী সুর্বণা রায়কে নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে হত্যার চার দিন পর অবশেষে ভোরের নিস্তব্ধতা ভেদ করে উঠে এলো প্রথম সুস্পষ্ট অগ্রগতির খবর—গ্রেপ্তার হলো এক যুবক, যার স্বীকারোক্তি তদন্তকে নতুন মোড়ে নিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোররাত। আলমপুর ইউনিয়নের শেরমস্ত বালাপাড়া তখনও কুয়াশায় মোড়া। সেই আঁধার চিরে পুলিশ বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করে ২২ বছরের মোরছালিনকে—পেশায় রাজমিস্ত্রীর সহযোগী। তথ্যপ্রযুক্তির ছায়া তাকে শেষ পর্যন্ত লুকিয়ে রাখতে পারেনি। পুলিশের দাবি, তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তদন্তের পরবর্তী ধাপের চাবিকাঠি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু সাইয়ুম তালুকদার জানান—হত্যার দুই দিন আগে মৃত মুক্তিযোদ্ধার ঘরেই টাইলস লাগানোর কাজ করেছিলেন মোরছালিন। পরিচিতির সূত্র ধরেই নাকি প্রবেশ, আর সেখান থেকেই ঘটনার জট খুলতে শুরু। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে সঙ্গে নিয়ে যোগেশ চন্দ্রের বাড়ির পাশ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে যাবে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টের ভাষায়, ‘অস্ত্র যেখানে, সত্যও সেখানেই লুকিয়ে থাকে।’
ঘটনা শুরুর দৃশ্যটা শিউরে ওঠার মতো। গত শনিবার দিবাগত রাত। কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে নিজের বাড়ি—যেখানে শান্ত সন্ধ্যাগুলোই ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু ওই রাতের ভোরে প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পান রক্তাক্ত দুই নিথর দেহ। মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক; আর তাঁর স্ত্রী সুর্বণা রায়—দুজনকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
মুহূর্তেই গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক আর অনুশোচনার মিশ্র গুঞ্জন—’এ রকম শত্রুতা কার?’
বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ সেই মামলার অগ্রগতি হিসেবে এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে—অন্যরা কারা, থাকলে কোথায়, সে প্রশ্ন এখনও ভাসমান।
তারাগঞ্জ থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোরছালিন হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পেয়েছি মূল্যবান তথ্যও।’
তবে তদন্তের স্বার্থে অন্য কিছু বলাতে তিনি অনড়—যেন অপরাধের অন্ধকার থেকে সত্যকে তুলে আনার যে সূক্ষ্ম সুতো, তা ছিঁড়ে না যায়।
ঘটনাটি এখন আর শুধু হত্যাকাণ্ড নয়—এটি এক মুক্তিযোদ্ধা দম্পতির নিভে যাওয়া জীবনের হিসাব, এক গ্রামের নৈতিক প্রশ্ন, এবং সেই প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃশ্যমান ও অদৃশ্য অনুসন্ধান।
Sharing is caring!