খুলনায় রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে গুলির শব্দে মৃত্যু সোহেলের
বিশেষ প্রতিনিধি :খুলনার রূপসার আকাশে বৃহস্পতিবার রাতটা ছিল অন্য রাতের মতোই শান্ত। চারপাশে অন্ধকারের ঘন কুয়াশা, দূরে কোনো কোনো বাড়ির জানালায় ক্ষীণ আলো। রাত ৮টা ২০ মিনিট। নৈহাটি ইউনিয়নের রহিমনগর গ্রামের মানিক সরদারের বালুর মাঠে হঠাৎই শোনা গেল গুলির শব্দ—একটির পর একটি, যেন অন্ধকারের বুক চিরে ধেয়ে আসা বজ্রপাতের মতো।
কিছুক্ষণ পরেই লোকজন দৌড়ে এল। ধুলা-মাটিতে লুটিয়ে আছে এক মানুষ—সোহেল হাওলাদার (৫০)। মুখে এখনও হালকা উষ্ণতা, চোখদুটি স্থির হয়ে আছে আকাশের দিকে।
সোহেল ওই গ্রামেরই মৃত রুস্তুম হাওলাদারের ছেলে। দীর্ঘদিন ছিলেন প্রবাসে, সদ্যই দেশে ফেরা। মানুষ বলছে, দেশে ফিরে নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন ছিল তার। আজ সেই ঘরে ফিরল নিথর দেহ।
রূপসা থানার ওসি (তদন্ত) আ. সবুর খান জানালেন, “রুটি আর দই কেনার জন্যই বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন সোহেল। দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে ওঁত পেতে ছিল। ছোড়া আটটি গুলি তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে।”
তিনি আরও বলেন, ‘হত্যার কারণ অনুসন্ধানে আমরা কাজ করছি। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
ঘটনাস্থলের ধুলোমাখা বালুর মাঠে এখনও শুকায়নি রক্তের ছাপ। একপাশে পড়ে আছে সোহেলের চপ্পল, অন্য পাশে মানুষের পদচিহ্নের জটলা। কেউ কেউ বলছে, ব্যক্তিগত শত্রুতা, কেউ বলছে জমি বা টাকার লেনদেন। কিন্তু উত্তরহীনই রয়ে গেছে প্রশ্ন—কেন গুলির নিশানা হলো একজন সদ্যফেরা প্রবাসী?
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আয়ুব সরদার বললেন, ‘সোহেল ছেলেটা শান্ত প্রকৃতির ছিল। বিদেশে কাজ করে কষ্টে যা কামিয়েছে, তাই নিয়ে ঘর তুলছিল। কে জানত এমন পরিণতি হবে!’
রহিমনগরের বাতাসে এখন শোকের ভার। রাতের নিস্তব্ধতায় এখনও ভেসে আসে মানুষের কান্নার শব্দ। সোহেলের মা ছেলেকে দেখতে গিয়ে বারবার বলছেন—
‘তুই তো শুধু রুটি আনতে গেছিলি, এই রকম করে ফিরলি ক্যান?’
একটা ছোট্ট গ্রামের বালুর মাঠ আজ এক হত্যার সাক্ষী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্তে নামলেও, গ্রামবাসীর মনে প্রশ্ন—এই গুলির রাজনীতি, প্রতিহিংসা আর ভয়ের জাল কবে ছিঁড়বে?
রাত শেষে সূর্য উঠবে ঠিকই, কিন্তু রহিমনগরের মানিক সরদারের মাঠে যে লালচে দাগ শুকিয়ে আছে, সেটি হয়তো অনেকদিন মুছে যাবে না।
৬ নভেম্বর ২০২৫
Sharing is caring!