
যশোর জেলা প্রতিনিধি: নয়ন রায়।
যশোরের মণিরামপুরে গত মাসের শেষ সপ্তাহে ঘটে যাওয়া দুটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের একটিতে পুলিশ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও অন্যটির মূল হোতা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অধরা থাকায় জনমনে উদ্বেগ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ঝাপা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামি সবুজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হলেও পৌরশহরে ভ্যানচালক মিন্টু হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাব্বির হালদার ওরফে বড় সাব্বির এখনো পলাতক।
জানা যায়, উপজেলার ঝাপা ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামে সাবেক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুলকে ধারালো চাকু দিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান আসামি সবুজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সবুজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, রাজগঞ্জ বাজারের কাছে একটি খেজুর গাছের পাশ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়। এই মামলায় মোট চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মণিরামপুর পৌরশহরের হাকোবা গ্রামে দুই সন্তানের জনক, নিরীহ ভ্যানচালক মিন্টুকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় নিহত মিন্টুর পরিবার পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে, যার প্রধান আসামি একই গ্রামের সাদেক হালদারের ছেলে মো. সাব্বির হালদার। ঘটনার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল আসামি সাব্বির গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিহতের পরিবারে তীব্র উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। যদিও মণিরামপুর থানা পুলিশ ফারুক ও ছোট সাব্বির নামে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে, তবে হত্যাকাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বড় সাব্বির ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিএনপির সম্পৃক্ততা ও প্রতিবাদের মুখে প্রশাসন
ভ্যানচালক মিন্টু হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি সাব্বির হালদার বিএনপির কর্মী হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তারে প্রশাসন গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই অভিযোগের বিপরীতে মণিরামপুর উপজেলা বিএনপি ভিন্ন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। উপজেলা বিএনপি এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এবং আসামির সঙ্গে দলের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ মো. ইকবাল হোসেন নিহত মিন্টুর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তার দুই সন্তানের সকল দায়ভার গ্রহণ করেছেন। তিনিসহ দলের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মফিজুর রহমান মফিজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন, জানাজায় অংশগ্রহণ এবং আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “খুনী কোনো দলের নয়, মিন্টু হত্যার প্রধান আসামি সাব্বিরকে গ্রেপ্তার দেখতে চাই” শিরোনামে পোস্ট দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বিএনপি হত্যার রাজনীতি করে না এবং কোনো অপরাধীর ঠাঁই দলে নেই।”
এ বিষয়ে মণিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমদাদুল হক জানান, “আসামি সাব্বিরকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মণিরামপুর থানা পুলিশসহ কয়েকটি টিম তাকে গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।”
Sharing is caring!