১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

কোম্পানীগঞ্জের সংরক্ষিত ওয়াকফ ভূমি শাহ আরপিন টিলা ধ্বংস করে পাথর লুটপাটের মহোৎসব চলছে।

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৫:২৭ অপরাহ্ণ
কোম্পানীগঞ্জের সংরক্ষিত ওয়াকফ ভূমি শাহ আরপিন টিলা ধ্বংস করে পাথর লুটপাটের মহোৎসব চলছে।

Manual4 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের প্রান্তিক জনপদ কোম্পানীগঞ্জের সংরক্ষিত ওয়াকফ ভূমি শাহ আরপিন টিলা ধ্বংস করে পাথর লুটপাটের মহোৎসব চলছে। পরিবেশ এবং প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে সংরক্ষিত এ টিলাভূমিতে চলছে ভয়াবহ রকমের ধ্বংসযজ্ঞ। উচু টিলা ভূমি বিলীন করে সেখানকার পাথর ও লাল মাঠি অপসারণ করে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা।

 

এদের সাথে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করছে পুলিশ, বিজিবি’র সমন্বয়কারী পরিচয়ে একটি চক্র। আরও আছেন রাজনৈতিকভাবে পরিচিত চিহ্নিত দুর্বৃত্ত যারা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সাইনবোর্ডধারি নব্য কুশীলব। পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী-এসব লুটেরা একাধিক মামলার দায় নিয়েও দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে লুটের মহোৎসব।

 

 

শাহ আরপিন টিলা থেকে নির্বিঘ্নে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার পাথর অপসারণ করে চলেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় প্রশাসনের কথিত নির্লিপ্ততা অথবা সম্পৃক্ততার কারণেই ওপেন সিক্রেট চলছে এ লুটপাট।

 

Manual1 Ad Code

পরিবেশ এবং প্রতিবেশের সংরক্ষিত অপার সৌন্দর্যের এ ওয়াক্ফ এস্টেট ১৩৭.৫০ একর ভূমি এক সময় উচু টিলা ও বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ ছিল। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চিকাডহর মৌজার সরকারী খতিয়ানের ৯৪ নম্বর দাগস্থিত এ টিলারাজি এখন আর নেই। টিলা ধ্বংসের পর ওই স্থানে বিশাল গর্ত করে ভূগর্ভ থেকে পাথর লুটছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় চিকাডহর, নারাইনপুর, জালিয়ারপার, পাড়ুয়া, ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পাথরখেকা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত অর্ধশতাধিক লোক এ লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের মূল হোতা বলে পরিবেশ অধিদপ্তর সহ অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়।

পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক গত ২৬ জানুয়ারি দায়ের করা মামলা থেকে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল শাহ আরপিনের পাথর লুটের মূল কুশীলব। এ চক্রের মূল হোতার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আমলে এ অঞ্চলের দুইশ’ কোটি টাকার পাথর আত্মসাতের মামলা রয়েছে। এছাড়া পাথর লুটের কারিগর হিসেবে আরও যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা হলেন,- জালিয়ার পার গ্রামের মনির মিয়া, আবদুল করিম, আব্দুর রশিদ, নারাইনপুর গ্রামের আইয়ুব আলী, আঞ্জু মিয়া, সোহরাব, তৈয়ব আলী, বয়তুল্যাহ, জালিয়ার পারের বাবুল মিয়া, আনফর আলী, আনোয়ার আলী, আবদুল হান্নান, পাড়ুয়া গ্রামের হাসনু চৌধুরী, আলী হোসেনসহ আরও অনেকে। পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক মামলার আসামী থাকা স্বত্বেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে লুটের মচ্ছব চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব পাথর লুটেই শেষ হচ্ছে না অপকর্মের খতিয়ান। লুটকৃত এ পাথর ট্রাক্টরে পরিবহনকালেও অন্য দুর্বৃত্ত চক্র এ থেকে আদায় করছে বখরা।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় নোয়াগাঁও মোড়ে স্থাপিত অস্থায়ী টহল কেন্দ্রের সামনে পাথরের ট্রাক্টর আটকে পুলিশ আদায় করছে গাড়ী প্রতি ৫০০ টাকা। পাথরের প্রতি গর্ত থেকে বিজিবি’র নাম ভাঙ্গিয়ে ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়ন ইউনিটের একটি দলের সভাপতি জনৈক আজির উদ্দিন মেম্বার আদায় করছেন ৫০০ টাকা করে। চিকাডহর মসজিদের পাশে টহলরত বি জি বি র সদস্যদের বিরুদ্ধে ট্রাক্টর প্রতি ৩০০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

Manual8 Ad Code

পাড়ুয়া উজানপাড়া এলাকায় ট্রাক্টর আটকিয়ে স্থানীয় “রাশা” বাহিনীর নামে আদায় হচ্ছে ট্রাক্টর প্রতি ২০০ টাকা, ভোলাগঞ্জের রুস্তুমপুর এলাকায় জনৈক শৈবাল, সাজন, রোকন, শাহরিয়ার প্রমুখ কিশোর গ্যাং গাড়ি প্রতি নিচ্ছে ২০০ টাকা, চিকাডহরে স্থানীয় মসজিদের নামে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। প্রশাসনিক আনুকূল্য, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গজিয়ে ওঠা বিশেষ দলের মদদপুষ্ট চাঁদাবাজদের প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় শাহ আরপিন এলাকা লুট হচ্ছে। এ লুটে আরও পরোক্ষ ইন্দন দিয়ে ফায়দা লুটছেন স্থানীয় কতেক নেতা, সাথে আছেন চিহ্নিত কতেক জনপ্রতিনিধি।

শাহ আরপিন এলাকার লুটপাট ও চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওজায়ের আল মাহমুদ আদনান চাঁদা আদায় সংক্রান্ত পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার খবর আমরা পাচ্ছি-এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বি জি বির কালাসাদক ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডারের ফোনে কল দিলে ফোন রিসিভ হয়নি।

Manual8 Ad Code

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট এর সহকারী পরিচালক বদরুল হায়দার জানান, শাহ আরপিন টিলা ধ্বংসের ব্যাপারে আমরা ইতোমধ্যে ৪০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছি। আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। শাহ আরপিন এলাকার পরিবেশ এবং প্রতিবেশ রক্ষায় আমরা বিধি মোতাবেক সকল আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Manual4 Ad Code

বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর উপ পরিচালক মামুনুর রশিদ শাহ আরপিন এলাকার পাথর লুটপাটের ব্যাপারে তার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়বদ্ধতা নেই বলে জানান। তিনি বলেন,- “লুট হওয়া পাথর খনিজ মন্ত্রণালয়ের এটা ঠিক আছে; তবে সামগ্রিক দায়বদ্ধতা অন্যদের।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code