১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আওয়ামীলীগ নেতার ছত্রছায়ায় ভূমিহীন থেকে কোটিপতি ছাতকের আব্দুল কুদ্দুস

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ০৩:৪৮ অপরাহ্ণ
আওয়ামীলীগ নেতার ছত্রছায়ায় ভূমিহীন থেকে কোটিপতি ছাতকের আব্দুল কুদ্দুস

Manual1 Ad Code

ছাতক প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক সিমেন্ট কারখানার কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট (সিবিএ) সভাপতি ও জাতীয় শ্রমিক লীগ সুনামগঞ্জ জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে কোটি টাকা আত্মসাৎ , অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন কারখানার অস্থায়ী শ্রমিক মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বাবুল। আগেও তার বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ হলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ধামাচাপা দেয় কুদ্দুস।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবরে দেয়া একটি লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রথমে রাজমিস্ত্রী ও পরবর্তীতে মাটি কাটার শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন এই আব্দুল কুদ্দুস। ১৯৯১ সালের ১৮ নভেম্বর ছাতক সিমেন্ট কারখানার খালাসি পদে চাকরিজীবন শুরু করেন কুদ্দুস। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। কারখানায় নানা সময় অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেছেন আব্দুল কুদ্দুসের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, কারখানার বিএমআরই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে মোটা অংকের টাকার অবৈধ সুযোগ নিয়েছেন আব্দুল কুদ্দুস। সমবায় সমিতি হচ্ছে কারখানার শ্রমিক- কর্মচারিদের একটি সমবায়ী সঞ্চয়ী প্রতিষ্ঠান। আব্দুল কুদ্দুস এ সমবায় সমিতির নামে সিবিএ সভাপতির প্রভাব খাটিয়ে ১৮৯ বস্তা খোলা সিমেন্ট ক্রয় দেখিয়ে প্রায় দশ হাজার বস্তা খোলা সিমেন্ট বের করে নেন আব্দুল কুদ্দুস ও তার সহযোগীরা। এই সিমেন্টের বাজার মূল্য প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা।

Manual7 Ad Code

একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কেপিআই ভুক্ত সংরক্ষিত এলাকায় শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা ছাড়া কারও প্রবেশাধিকার না থাকলেও বহিরাগতদের বাসা ভাড়া দিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আব্দুল কুদ্দুস। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব বাসা-বাড়িতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন বহিরাগত মানুষ। এতে কারখানা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া ৪নং এলাকা বাজারে বিনামূল্যে চাকরিজীবীদের মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও দোকানপ্রতি পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা করে আদায় করায় অনেক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

কারখানার বিএমআরই প্রকল্পের কাজ চলাকালে সনাতন ওয়েট প্রসেসের কয়েক কোটি টাকার লৌহজাত দ্রব্য স্ক্যাপ পড়ে আছে কারখানা প্রাঙ্গণে। এসব স্ক্যাপ থেকে ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে ২ টন স্ক্যাপ চুরি করে ভাঙাড়ির কাছে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েন কারখানার এমটিএস বিভাগের খালাসি ও আব্দুল কুদ্দুসের খালাতো ভাই ইউসুফ আলী। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন হলে কুদ্দুস জড়িত থাকায় সিবিএ সভাপতির প্রভাব খাটিয়ে কমিটির প্রতিবেদন ইউসুফ আলীর পক্ষে নিয়ে যান।

Manual3 Ad Code

কারখানার বিএমআরই প্রকল্পে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে সেলিম এন্ড ব্রাদার্সের নাম ব্যবহার করে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ কাজেও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কুদ্দুসের নামে। এছাড়া তার বড় ছেলে জসিম জুহানির সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কারখানার সিভিল ওয়ার্কসহ অসংখ্য টেন্ডার নিয়মবহির্ভূতভাবে বাগিয়ে নিয়ে বাপ-ছেলে মিলে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে করছেন কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয়।

কুদ্দুস কারখানার প্রধান ফটকে দায়িত্বরত হাবিলদার মাসুক মিয়াকে দিয়ে একটি ট্রাক্টর কারখানার ভেতর প্রবেশ করিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিতে চাইলে কারখানা কর্তৃপক্ষ মালামালসহ আটক করে তাৎক্ষণিক মাসুক মিয়াকে সাসপেন্ড ও বদলি করে। ঘটনাটি নিরাপত্তা অফিসে লিপিবদ্ধ আছে। ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের নিয়ন্ত্রণাধীন ট্যাকেরঘাট প্রকল্পের প্রায় ৬৭১ টন স্ক্যাপ মালামাল এবং ছাতক সিমেন্ট কারখানা হতে ভারতের কোমড়া পর্যন্ত পাথর বহনকারী রোপলাইনের প্রায় ১৪১টি লোহার টাওয়ার, রোপওয়ের তার ও অন্যান্য মালামালসহ প্রায় ৬২৭ টনসহ ১২৯৮ টন নির্ধারণ করেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় শ্রমিকদের ধারণা, মূলত আরও বেশি মালামাল ছিল। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকার ও বেশি। কিন্তু অভিযোগে বলা হয়েছে, কুদ্দুস ও তার সহযোগীরা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করে বর্নিত মালামাল মাত্র ৫ কোটি ৫ লক্ষ ৮২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।

Manual8 Ad Code

কারখানার স্থানীয় শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, কুদ্দুসের পিতা মোহাম্মদ হোসেন ছাতকে এসে প্রথমে কারখানা এলাকায় মাটি কাটার শ্রমিকের কাজ করতেন। পরবর্তীতে সিমেন্ট কারখানায় স্থায়ী শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ পান। পিতার চাকরির সুবাদে কুদ্দুসও কারখানার একজন স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এর আগে তিনি রাজমিস্ত্রি ও দিনমজুর হিসেবে মাটি কাটার কাজ করতেন।

কুদ্দুস একজন ভূমিহীন হিসেবে কারখানা এলাকায় নোয়ারাই ইসলামপুর গ্রামে একটি ঝুপড়িঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করলেও এখন জরাজীর্ণ ঝুপড়িঘরের স্থলে রয়েছে একটি আলিশান পাকা বাড়ি। পৌরসভার নোয়ারাই ইসলামপুর মহল্লার ৩১০৩ খতিয়ানে রয়েছে ১ একর ৭০ শতাংশ জায়গা, একই এলাকায় রয়েছে আরও ২০০ শতাংশ জায়গা। কুদ্দুসের স্থায়ী পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীতে রয়েছে ১৩ একর জায়গা, কারখানার এলাকায় ৪ নং বাজারে রয়েছে কুদ্দুসের ছেলে জিসানের নামে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, মধ্য বাজারে রেড হিল নামে রয়েছে আরেকটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। রয়েছে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কুদ্দুসের ছেলেদের নামে ব্যাংক হিসাবে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আয়ের টাকা।

ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রহমান বাদশাহ বলেন, শুনেছি সিবিএ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে দুদকে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে আমার কাছে কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। দিলে কোম্পানির নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নূর-ই-আলম বলেন, দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে।

Manual7 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code