১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিতে বেরোবির আট শিক্ষার্থীর উদ্ভাবন

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৭:৩২ অপরাহ্ণ
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিতে বেরোবির আট শিক্ষার্থীর উদ্ভাবন

Manual7 Ad Code

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিতে বেরোবির আট শিক্ষার্থীর উদ্ভাবন

লোকমান ফারুক, বিশেষ প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষার্থী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে গড়ে তুলেছেন একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম—‘সিভিকশিল্ড’। লক্ষ্য একটাই: বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠকে নথিভুক্ত করা, নিরাপত্তা দেওয়া এবং মূলধারায় আনা।

Manual2 Ad Code

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে লক্ষ্য করেন, নারী, ট্রান্সজেন্ডার, আদিবাসী, যৌনকর্মী, অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও চা–বাগানের শ্রমিকদের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত। ডিজিটাল নিরাপত্তা, অনলাইন হয়রানি ও আইনি জটিলতা তাদের জীবনে বড় বাধা। এসব অভিজ্ঞতা থেকেই উদ্যোগটির সূচনা।

প্ল্যাটফর্মের কাঠামো:
সিভিকশিল্ড গল্পকথা, নাগরিক শিক্ষা, কমিউনিটি সম্প্রচার ও মানব–এআই সমন্বিত আইনি সহায়তার একটি সমন্বিত ব্যবস্থা। উদ্দেশ্য—প্রান্তিক মানুষের অভিজ্ঞতা দৃশ্যমান করা এবং তাদের অংশগ্রহণের নিরাপদ পরিসর তৈরি।
উদ্যোগ বাস্তবায়নে টেকনিক্যাল ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে এরাইজ ইয়ুথ ফাউন্ডেশন। তাদের সহযোগিতায় প্ল্যাটফর্মের ডিজিটাল অবকাঠামো, গবেষণা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম শক্তিশালী হয়েছে।

দলের ভূমিকা:
আট সদস্যের দলটি নির্দিষ্ট দায়িত্বে কাজ করছে।
সাইয়েদা তাসনিম গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ দেখছেন।
নাজনিন মুসফিকা প্রশিক্ষণ ও যুব সম্পৃক্ততা দেখছেন।
শুরমা আফরোজ মিলি আইন ও অধিকার সংক্রান্ত কাজে যুক্ত।
আহসান হাবিব অন্তর্ভুক্তি ও বৈচিত্র্য শাখায় কাজ করছেন।
বিশাখা কনটেন্ট ও মিডিয়া যোগাযোগের দায়িত্বে।
নাফিসা খুশি অপারেশনস ও প্রশাসন দেখছেন।
মনিকা মারান্ডি মাঠপর্যায়ের কমিউনিটি আউটরিচে কাজ করছেন।
আফসানা ইসলাম আরনিকা ফাইন্যান্স ও হিসাবরক্ষণ পরিচালনা করছেন।

Manual6 Ad Code

নাফিসা খুশি বলেন, “সিভিকশিল্ড মানুষের কণ্ঠস্বরকে সুরক্ষা দেয়। অনেকেই প্রথমবারের মতো নিজের গল্প বলার সুযোগ পাচ্ছেন।”
নাজনিন মুসফিকা জানান, “যুবদের সম্পৃক্ততা ছাড়া টেকসই পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমরা নেতৃত্ব ও ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিচ্ছি।”

Manual2 Ad Code

মিশন ও লক্ষ্য:
সিভিকশিল্ডের মিশন—বাস্তব গল্পকে সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার;
নাগরিক শিক্ষা ও নেতৃত্ব জোরদার;
প্রান্তিক মানুষের অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা;

উদ্যোগের লক্ষ্যগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে নারী, তরুণ, আদিবাসী, ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়, যৌনকর্মী, অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক, চা–বাগান শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, স্থানীয় সাংবাদিক ও নাগরিক কর্মীরা।

মডিউল:
১) গল্পকথা ও অন্তর্ভুক্তি—প্রান্তিক মানুষের অভিজ্ঞতা নথিভুক্তকরণ।
২) নাগরিক শিক্ষা কেন্দ্র—ভোট, সংবিধান ও প্রশাসন নিয়ে গেম, অডিও ও ভিডিও।
৩) ফাইন্ড মাই এডভোকেট—মানব ও এআই-সহায়তাভিত্তিক আইনি সহায়তা।

Manual6 Ad Code

কার্যক্রম:
তিন অঞ্চলে (রাজশাহী, রংপুর, সিলেট) পাইলট প্রকল্প চলছে। মোবাইল–ফার্স্ট প্ল্যাটফর্ম, গবেষণা কার্যক্রম ও জাতীয় পর্যায়ে নেটওয়ার্ক তৈরির কাজও চলছে।

প্রত্যাশিত প্রভাব:
উদ্যোগটির লক্ষ্য—১০ হাজার প্রান্তিক নাগরিকের ডিজিটাল ও নাগরিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি।
৩ হাজার অধিকারের লঙ্ঘন শনাক্ত করে আইনি সহায়তার সঙ্গে যুক্ত করা।
সিভিকশিল্ড এফএম-এর মাধ্যমে ১০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছানো।
৫০০+ বাস্তব গল্প প্রকাশ।

দীর্ঘমেয়াদি ভিশন:
সিভিকশিল্ড এমন একটি বাংলাদেশ কল্পনা করে যেখানে পরিচয় বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক নিরাপদে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নাগরিক জীবনে অংশ নিতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক মনে করেন, তরুণদের এই উদ্যোগ শুধু প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবন নয়; বরং নতুন প্রজন্মের সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি নির্ভরযোগ্য দৃষ্টান্ত। তাদের ধারণা—ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় সিভিকশিল্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
১৭ নভেম্বর ২০২৫

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code