১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পঞ্চগড় সীমান্তে অন্ধকার ভেদ করে: ৫৬ বিজিবির অভিযানে আটক ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকার ভারতীয় শাড়ি–শাল।

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৮:৪৮ অপরাহ্ণ

Manual6 Ad Code

পঞ্চগড় সীমান্তে অন্ধকার ভেদ করে: ৫৬ বিজিবির অভিযানে আটক ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকার ভারতীয় শাড়ি–শাল।

Manual1 Ad Code


লোকমান ফারুক : বিশেষ প্রতিনিধি।

ভোরের প্রথম আলো তখনও সীমান্তের ঘাসে জমা শিশির শুকোতে পারেনি। বাতাসে কুয়াশার মিহি পর্দা। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার লাহেরীপাড়া সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা পিলার ৭৭১/১–এস—যেন দুই দেশের মাঝের এক নীরব প্রহরী। ঠিক সেই নীরবতার মধ্যেই শনিবার ভোরে চলল অদৃশ্য এক রুদ্ধশ্বাস পদচারণা—বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের বিশেষ অভিযান।

সুবেদার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ধামেরঘাট বিওপির ছোট্ট টহলদলটি এগোচ্ছিল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে। সীমান্ত থেকে মাত্র ১২০ গজ ভেতরে। কৃষিজমির আল বেয়ে তাদের নিঃশব্দ অগ্রযাত্রা—যেন কোনো অদৃশ্য সুতা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বিজিবির এক সদস্য পরে বললেন, ‘যদি পাঁচ মিনিট দেরি হত, পণ্যগুলো হয়তো হাওয়ার মতো গায়েব হয়ে যেত।’

Manual1 Ad Code

সেই পণ্য—১৯ পিস ভারতীয় শাড়ি আর ৯০ পিস শাল চাদর। মোট মূল্য প্রায় ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। মালিকবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকা এই বস্তাগুলো যেন রাতের আঁধারে ভুলে যাওয়া কোনো অপরাধের নীরব সাক্ষী।

প্রেস বিজ্ঞপ্তির ভাষায় এটি ছিল “বিশেষ অভিযান।” কিন্তু মাঠের মানুষদের কাছে—এ যেন লুকোচুরি খেলার এক পরিণতি, যেখানে আইন আর চোরাচালানিরা প্রতিদিন সীমান্তরেখায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত। অনেকটা নদীর স্রোতের মতো—থামেও না, থামানোও কঠিন।

Manual2 Ad Code

৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল বদরুদ্দোজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সদর দপ্তরের নির্দেশনায় চোরাচালান প্রতিরোধে গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। তার ভাষায়, “সীমান্তে অবৈধ পণ্যের প্রবেশ রোধে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছি।’ দিন-রাত নজরদারি আছে, অভিযান চলবেই।’

তবে সীমান্তবাসীর প্রশ্ন—এত কড়াকড়ির মাঝেও কীভাবে ঘটে এসব অনুপ্রবেশ? এলাকার কয়েকজন নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শালের বাজার জমে ওঠে; আর তখনই সক্রিয় হয় ‘ট্রানজিট চক্র।’ তাদের দাবি—দেশীয় ব্যবসায়ীদেরও কেউ কেউ এই অন্ধ প্রবাহের সুবিধাভোগী।
আইনশাস্ত্রের ভাষায়—মেন্স রিয়া থাকলে অপরাধ একই থাকে, পণ্য বদলালেই অপরাধ বদলায় না। আর সাংবাদিকতার ভাষায়—ঘটনার ভেতরের ঘটনা সবসময় দৃশ্যমান নয়। সীমান্তে এই পণ্যজব্দ তারই ক্ষুদ্র প্রকাশ।

Manual4 Ad Code

প্রশ্ন রয়ে যায়—চোরাচালান কি শুধু একটি অপরাধ, নাকি একটি নীরব অর্থনৈতিক প্রবাহ, যা কারও লাভের জন্য আবার কারও ক্ষতির দায় রেখে যায়?
বিজিবির সদস্যরা যখন সেই বস্তাগুলো তুলে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ভোরের আলো একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছিল। দূর থেকে মনে হচ্ছিল—আইন যেন অন্ধকারের ভেতর থেকে আলো উদ্ধার করছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code