শাকুর মাহমুদ চৌধুরী (উখিয়া) কক্সবাজার।।
সাংবাদিকতা কোনো করপোরেট স্বার্থের দাসত্ব নয়, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতিয়ারও নয়। সাংবাদিকতা হচ্ছে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসী অঙ্গীকার- যেখানে স্বাধীনতা, নির্ভুলতা ও নৈতিকতা একসূত্রে গাঁথা। অথচ বর্তমান বাস্তবতায় সেই মৌলিক মূল্যবোধ আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। অপ-সাংবাদিকতা নামক এক ভয়ংকর ব্যাধি ধীরে ধীরে গ্রাস করছে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা ও মর্যাদা।
ভিত্তিহীন তথ্য, যাচাইহীন সংবাদ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর গুজবকে সংবাদে রূপ দেওয়ার প্রবণতা এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়- এটি একটি সংঘবদ্ধ অপসংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে।
এর ফলে সত্য চাপা পড়ে যাচ্ছে, মিথ্যা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, আর জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো- এই অপসাংবাদিকতার দায় শেষ পর্যন্ত পুরো সাংবাদিক সমাজকেই বহন করতে হচ্ছে।
স্বাধীন সাংবাদিকতা মানে লাগামহীন আচরণ নয়। স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ হলো- সত্য বলার সাহস, ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়ানোর দৃঢ়তা এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা। সংবাদ পরিবেশন কোনো আবেগের জায়গা নয়। এটি তথ্য, যুক্তি ও নৈতিকতার শুদ্ধ সমন্বয়।
যারা এই নীতির বাইরে গিয়ে সাংবাদিকতার নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করছে, তারা কেবল পেশাটিকেই কলুষিত করছে না- তারা রাষ্ট্র, সমাজ ও গণতন্ত্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই সংকট উত্তরণে বিভক্ত সাংবাদিক সমাজ নয়- ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সংগঠনই হতে পারে একমাত্র শক্ত প্রতিরোধ।
এখন আর নীরব থাকার সুযোগ নেই। অপ-সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান, কঠোর ও সংগঠিত অবস্থান নিতে হবে। জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের সব সাংবাদিক সংগঠনকে এক ছাতার নিচে এসে পেশাগত শুদ্ধতা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
নৈতিকতা-বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং একটি সর্বজনগ্রাহ্য আচরণবিধি বাস্তবায়ন- এসব এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। একই সঙ্গে গণমাধ্যম মালিকপক্ষের দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই।
যোগ্যতা ও নৈতিকতা বিবেচনা না করে সাংবাদিকতার পরিচয় দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রকেও নিশ্চিত করতে হবে- সংবাদকর্মীদের স্বাধীনতা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, আবার
অপব্যবহারও যেন প্রশ্রয় না পায়। সবশেষে বলতে হয়- সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সাংবাদিকদের হাতেই। সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠ, নৈতিকতায় আপসহীন অবস্থান এবং সাহসী কলমই পারে অপ-সাংবাদিকতার বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে। আজ যদি আমরা না দাঁড়াই, তবে আগামী দিনে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
এখনই সময়- সত্যের পক্ষে, পেশার মর্যাদার পক্ষে, এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পক্ষে এক কাতারে দাঁড়ানোর।
Sharing is caring!