২রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

ভুয়া পরিচয়, ভয়ভীতি ও প্রতারণার সাম্রাজ্য — শেখ তিতুমীর আকাশের বিরুদ্ধে বিস্তৃত অভিযোগপত্র

admin
প্রকাশিত মে ৪, ২০২৫, ০২:৩৪ অপরাহ্ণ
ভুয়া পরিচয়, ভয়ভীতি ও প্রতারণার সাম্রাজ্য — শেখ তিতুমীর আকাশের বিরুদ্ধে বিস্তৃত অভিযোগপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশকাল: [৪/৫/২০২৫]

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে “শেখ তিতুমীর আকাশ” নামধারী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রতারণা, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার, রাষ্ট্রীয় ও সাংবাদিক পরিচয়ের অপব্যবহার, এবং সাইবার হুমকির অভিযোগে জনমনে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। একাধিক ভুক্তভোগী, সাংবাদিক ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণসহ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।

ভুয়া পরিচয়ের ভয়ঙ্কর ব্যবহার

শেখ তিতুমীর আকাশ কখনো নিজেকে “প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি”, কখনো “র‍্যাব-১” এর সদস্য, কখনোবা “প্রেস কাউন্সিল অনুমোদিত পত্রিকার সম্পাদক” হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যায়, তিনি নামের পাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সাথে তোলা ছবি ব্যবহার করে নিজের প্রভাবশালী পরিচয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।

একাধিক স্ক্রিনশটে দেখা যায়, তিনি ভয়ভীতি প্রদর্শনমূলক বার্তা প্রেরণ করে সাধারণ নাগরিক ও সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি বার্তায় তিনি লিখেছেন — “তোকে খাবো খোদার কসম”, “তোর মার সামনে দিয়া ভরে দিব তোকে”— যা বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও জাল নথি

“DAINIK BOISHAMMO M.C. LTD” নামক এক কথিত মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে পরিচয় দিলেও এর কোনো বৈধ কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা প্রেস কাউন্সিলের অনুমোদন নেই। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবহৃত ইনকর্পোরেশন সনদের সত্যতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন “দৈনিক বৈষম্য মুক্ত” পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক বিপ্লব আহমেদ। তিনি বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রেস কার্ড দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করছে।”

আরও অভিযোগ উঠেছে, নতুন সাংবাদিকদের কাছ থেকে অনলাইন পোর্টাল তৈরি, সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও প্রশিক্ষণের নামে টাকা আদায় করেছেন তিনি। অনেক তরুণ সাংবাদিক তার প্রলোভনে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে হুমকি

তাঁর একাধিক বার্তায় দেখা যায়, তিনি নিজেকে র‍্যাব-১ এর সদস্য হিসেবে দাবি করে ভয় দেখিয়েছেন। এক চ্যাট বার্তায় বলা হয়েছে — “যখন র‍্যাব ১ ছিলাম তখন ঠাস ঠাস দিয়ে দিতাম।” এই ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ের চরম অপব্যবহার এবং ফৌজদারি অপরাধের আওতাভুক্ত।

ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও এনজিও জালিয়াতি

তাঁর পরিচালিত “জাতীয় অনলাইন প্রেস কাউন্সিল (NOPC)” এবং “B.S.K.S International Media Company Ltd.” নামক প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন নম্বর Govt. No. S-0137/19 ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ সরকারি নথি অনুযায়ী এটি “Shikha Society of Underprivileged Krishna for Happiness & Improvement” নামক একটি এনজিওর রেজিস্ট্রেশন নম্বর।

এই নম্বর ব্যানার, পোস্টার এবং আইডি কার্ডে ব্যবহার করে সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

সাংবাদিকদের উপর অপপ্রচার ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

ভুক্তভোগীদের তালিকায় রয়েছেন —

প্রবাসী জামাল হাওলাদার

স্বাধীন ভাষার সাবেক সম্পাদক ফকির হাসান

দৈনিক ক্রাইম তালাশ সম্পাদক মাহমুদুল কবির নয়ন

দৈনিক বৈষম্য মুক্ত সম্পাদক বিপ্লব আহমেদ

গাইবান্ধার রিপোর্টার মোসাম্মৎ লাকি আক্তার

হিলির সাংবাদিক শেখ টনি

এবং আরও অনেক সাংবাদিক যাঁরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, শেখ তিতুমীর আকাশ তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেছেন, না দিলে ফেসবুকে মিথ্যা অপপ্রচার ছড়িয়েছেন। কারও সাথে সমঝোতা হলে অপপ্রচারের পোস্ট মুছে ফেলেন, না হলে সেটি ফেসবুকে রেখে ভয় সৃষ্টি করেন। এভাবে তিনি “হত্যা মামলা”, “ছিনতাই”, এমনকি “রাষ্ট্রবিরোধী কাজের” ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাজনৈতিক বক্তব্য ও উগ্র প্রোপাগান্ডা

শেখ তিতুমীর আকাশ ফেসবুকে সরকারি দলের পক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য এবং উগ্র রকমের বিদ্বেষপূর্ণ বার্তা ছড়িয়ে চলেছেন। একাধিক পোস্টে তিনি “বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র”, “ড. ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংককে টার্গেট করা” সহ নানা উস্কানিমূলক মন্তব্য করে গেছেন। এগুলোর উদ্দেশ্য ছিল নিজেকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ হিসেবে প্রমাণ করে প্রভাব বিস্তার।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান

দৈনিক বৈষম্য মুক্ত পত্রিকার সম্পাদক বিপ্লব আহমেদ বলেন:

> “এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে আমরা সাইবার ক্রাইম ইউনিট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরি।”

উপসংহার

প্রকাশিত অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণ যদি সত্য হয়, তবে শেখ তিতুমীর আকাশের কার্যকলাপ বাংলাদেশের সাংবাদিকতা, সাইবার নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা ধ্বংস করার সামিল। অবিলম্বে কঠোর তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারকদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে।

ইনকিলাব বাংলাদেশ — এই স্লোগান যেন ভুয়া পরিচয়ের অস্ত্র না হয়, বরং হয় দেশের সার্বিক কল্যাণ ও সত্য প্রতিষ্ঠার প্রতীক।

Sharing is caring!