২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩রা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

প্রধান বিচারপতির আসনে জুবায়ের রহমান চৌধুরী, শপথ ২৮ ডিসেম্বর

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২২, ২০২৫, ১১:০২ অপরাহ্ণ
প্রধান বিচারপতির আসনে জুবায়ের রহমান চৌধুরী, শপথ ২৮ ডিসেম্বর

Manual2 Ad Code

লোকমান ফারুক, বিশেষ প্রতিনিধি

ঢাকার শীতল সকালগুলোতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ এমনিতেই নীরব থাকে। কিন্তু সোমবারের বাতাসে ছিল এক ধরনের অদৃশ্য চাপ—যেন সংবিধানের পাতাগুলো নিজেই উল্টে যাচ্ছে। বিচারালয়ের অলিন্দে তখন আর কেবল মামলা বা রায় নয়, ঘুরপাক খাচ্ছিল একটি নাম। সেই নাম—জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

বাংলাদেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিচারিক দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন আপিল বিভাগের এই জ্যেষ্ঠ বিচারপতি।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যেকোনো সময় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন (গেজেট) প্রকাশ হতে পারে।

আগামী ২৮ ডিসেম্বর নতুন প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।

Manual2 Ad Code

এই পরিবর্তন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। সংবিধানের নির্ধারিত সময়রেখা মেনেই ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় আগামী ২৭ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বিচারক জীবনের ইতি টেনে তিনি ইতোমধ্যে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন ওমরাহ পালনের জন্য।

রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের শেষ অধ্যায় যেন তিনি শুরু করলেন নিরব ইবাদতের মধ্য দিয়ে।

তার অনুপস্থিতিতে বিচারালয়ের হাল ধরেই আছেন জুবায়ের রহমান চৌধুরী—ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।

Manual3 Ad Code

ফলে শপথের আগেই কার্যত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নৈতিক ও প্রশাসনিক ভার তার কাঁধে এসে পড়েছে।

আইনের এই দীর্ঘ যাত্রাপথ হঠাৎ করে তৈরি হয়নি।
১৯৮৫ সালে জজ কোর্টে আইনজীবী হিসেবে যাত্রা শুরু করেন জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

দুই বছর পর, ১৯৮৭ সালে, তিনি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে তালিকাভুক্ত হন।

Manual2 Ad Code

আইনজীবী হিসেবে তার সময়কাল ছিল নীরব কিন্তু ধারাবাহিক—কোনো আলোচনার কেন্দ্রে না থেকেও আদালতের ভেতরের ভাষা রপ্ত করার কাজেই ছিলেন ব্যস্ত।

২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট তাকে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর সেই নিয়োগ স্থায়ী হয়।

দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি হাইকোর্ট ও পরে আপিল বিভাগের বিচারিক কাঠামোর ভেতরে নিজেকে স্থাপন করেছেন—কখনো উচ্চকণ্ঠে নয়, বরং রায়ের ভাষা আর যুক্তির দৃঢ়তায়।

Manual5 Ad Code

২০২৪ সালের ১২ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাকে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। সেই নিয়োগের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে যায়—বিচারালয়ের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সারিতে তার নাম আর গোপন নেই।

শিক্ষাজীবনেও তিনি বহুমাত্রিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম সম্পন্ন করার পর যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক আইনের ওপর আরও একটি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

ফলে তার বিচারিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কেবল দেশীয় আইন নয়, আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ডও প্রতিফলিত হয়—এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল।

তবে প্রধান বিচারপতির আসন কেবল মর্যাদার নয়, এটি প্রশ্নেরও। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে সম্পর্ক, নাগরিক অধিকার ও সাংবিধানিক ভারসাম্য—সবকিছু এসে জমা হয় এই একটি চেয়ারে।
ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের অবসরের মধ্য দিয়ে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটছে। আর জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নিয়োগের মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন এক অধ্যায়—যেখানে প্রতিটি রায় শুধু আইন নয়, সময়ের সাক্ষ্যও হয়ে থাকবে।

সুপ্রিম কোর্ট ভবনের উঁচু স্তম্ভগুলো নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। তারা বহু প্রধান বিচারপতিকে দেখেছে—কেউ ইতিহাস হয়েছেন, কেউ বিতর্কে।

এখন প্রশ্ন একটাই—এই স্তম্ভগুলোর ছায়ায় দাঁড়িয়ে জুবায়ের রহমান চৌধুরী কোন ইতিহাস লিখবেন?
উত্তর দেবে সময়। আর সময়ের কাঠগড়ায়, শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় বিচারই।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code