৩১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

‘কাশি’ ছিল কোডওয়ার্ড: দিনাজপুরে ডিভাইসসহ পরীক্ষার্থী আটক, পুলিশ বলছে—চক্র ঢাকায়

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ০৭:৩৮ অপরাহ্ণ
‘কাশি’ ছিল কোডওয়ার্ড: দিনাজপুরে ডিভাইসসহ পরীক্ষার্থী আটক, পুলিশ বলছে—চক্র ঢাকায়

Manual7 Ad Code

ডেস্ক রিপোর্ট, রংপুর

শনিবার দুপুরে দিনাজপুর শহরের কেরী মেমোরিয়াল হাই স্কুলে খাদ্য অধিদপ্তরের উপ-খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ পরীক্ষা চলছিল।

Manual3 Ad Code

কক্ষ ১০১–এ বসে থাকা এক তরুণ বারবার কাশছিলেন, প্রথমে কেউ খেয়াল করেনি। কিন্তু ধীরে ধীরে পরীক্ষার নীরবতায় সেই কাশি হয়ে ওঠে অস্বস্তিকর, ছন্দবদ্ধ ও পুনরাবৃত্তিমূলক।

দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শিক্ষক কাছে গিয়ে লক্ষ্য করেন, তরুণটির হাতের কাছে ছোট এক ডিভাইস। সন্দেহ হলে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশকে খবর দেন। মিনিট দশেকের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যায় গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা।

আটক করা হয় কৃষ্ণকান্ত রায় (২৫)কে, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের আশুতোষ রায়ের ছেলে। সদ্য স্নাতক শেষ করা এই তরুণ শহরের ফকিরপাড়ায় একটি ছাত্রাবাসে থাকতেন।

ডিভাইসের ভেতরের গল্প দিনাজপুর সদর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. নুরুজ্জামান জানান, কৃষ্ণকান্ত প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন—তিনি ঢাকায় অবস্থানরত একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। “প্রশ্নের সেট’ পদ্মা’ হলে কাশি দিতে বলা হয়েছিল।

Manual2 Ad Code

এর মাধ্যমে চক্রটি নিশ্চিত হতো কোন প্রশ্নপত্র চলছে,’ বললেন ওসি। চক্রটি এরপর হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নপত্রের ছবি পেত পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর থেকে। শহরের ফকিরপাড়া ও সুইহারি এলাকার দুটি ছাত্রাবাসে বসে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা তৈরি করতেন উত্তরপত্র। ডিভাইসের অপর প্রান্ত থেকে কৃষ্ণকান্ত শুনতেন ক্রমানুসারে উত্তর—‘ক’ ‘খ’ ‘গ’ ‘ঘ’। শুনে শুনে তিনি দাগ দিতেন প্রশ্নপত্রে, পরে ওএমআর শিট পূরণ করতেন নিখুঁতভাবে।

আমরা নজর রাখছিলাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগেই আমাদের কাছে তথ্য ছিল কেউ একজন ডিভাইস ব্যবহার করছে। কিন্তু কে, সেটি নিশ্চিত ছিল না। আমরা বিশেষ নজরদারি চালাই, পরে কক্ষ ১০১-এ কৃষ্ণকান্তের আচরণে সন্দেহ হয়। তল্লাশি করতেই রহস্য বেরিয়ে আসে।’

Manual2 Ad Code

ঘটনার পর কৃষ্ণকান্ত ছাড়াও তার ভাইসহ আরও দুজনকে কেন্দ্রের বাইরে থেকে আটক করা হয়। পুলিশ বলছে, ‘তারা পরীক্ষার সময় বাইরে থেকে যোগাযোগ রাখছিলেন।’ প্রশ্নফাঁসের ছায়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস.এম. হাবিবুল হাসান বলেন, ‘এটি একক ঘটনা নয়, বরং বড় একটি সিন্ডিকেট।

আমরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান শুরু করেছি। পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ কৃষ্ণকান্তের স্বীকারোক্তি ও জব্দ করা ডিভাইসের তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশ এখন ঢাকার সংযোগসূত্র খুঁজছে।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় এমন পদ্ধতি ব্যবহার করছে। শেষের দৃশ্য পরীক্ষা শেষে কেরী মেমোরিয়াল স্কুলের মাঠে তখনও কানাঘুষা—’একটা কাশি, আর সব ধরা।’

Manual5 Ad Code

সেই কক্ষের বাতাসে যেন এখনো ভাসছে ব্যর্থ এক প্রতারণার প্রতিধ্বনি। দিনাজপুরের এই ঘটনার পর নিয়োগ পরীক্ষার সততা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—প্রযুক্তির যুগে কি নৈতিকতা আরও সস্তা হয়ে যাচ্ছে?

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code