১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রংপুরে দাদন ব্যবসায়ীর হামলায় ১২ পরিবার বাড়িছাড়া

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ০৮:৪৭ অপরাহ্ণ
রংপুরে দাদন ব্যবসায়ীর হামলায় ১২ পরিবার বাড়িছাড়া

Manual5 Ad Code

ডেস্ক নিউজ, রংপুর

রংপুর সদর হাসপাতাল হরিজন কলোনি গলিপথ নিঃস্তব্ধ। ভাঙা দরজা, তালাবদ্ধ ঘর, আর শূন্য উঠোনে ঝুলে আছে কাপড়ের টুকরো—যেন কোনো আকস্মিক ঝড়ে উড়ে যাওয়া জীবনের অবশিষ্ট চিহ্ন।

এই নিস্তব্ধতার পেছনে আছে এক ভয়াবহ গল্প—দাদন ব্যবসায়ী হৈমন্তী রানী ও তার সহযোগীদের হামলায় উচ্ছেদ হয়েছে বারোটি হরিজন পরিবার। শনিবার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এই পরিবারের সদস্যরা কাঁপা গলায় বলছিলেন তাদের নিপীড়নের কথা।

বক্তারা অভিযোগ করেন, দাদন ব্যবসায়ী হৈমন্তী, টুটুল, তপন, রনজিত, জয় ও রানা মিলে কলোনিতে এক আতঙ্কের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই হামলা, হুমকি আর উচ্ছেদ—এ যেন রোজকার দুঃস্বপ্ন।

কলোনির বাসিন্দা সজনী রাণীর গলায় আতঙ্কের সাথে জমে থাকা ক্ষোভ। “তার কথা মতো না চললে এলাকায় থাকা মুশকিল,’ বললেন তিনি। “আমার মায়ের কাছে সুদের টাকা পায়। সেই টাকার জন্য আমাকে মারধর করে এলাকা ছাড়া করেছে।’

Manual3 Ad Code

সদর হাসপাতাল কলোনির সাবেক সভাপতি শাকিল বাসফোরের মা জেবা রানী জানালেন, ‘সুদের টাকার জন্য যাকে তাকে ধরে নির্যাতন করে, ঘরে তালা দেয়। আমার ছেলেকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়—তিনটা সেলাই পড়েছিল। এখন আমরা ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি না।’ ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে এক অদৃশ্য ক্ষমতার ছায়া স্পষ্ট।

তারা বলছেন, আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরও কোনো সাড়া মেলেনি। থানায় গিয়েও অভিযোগের নড়াচড়া নেই। সেই নীরবতাই যেন হামলাকারীদের সাহস জুগিয়েছে। রেখা রানী নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা পছন্দ করে বিয়ে করলে হৈমন্তী মোটা অংকের টাকা দাবি করে। না দিলে এলাকা ছাড়া হতে হয়।

Manual3 Ad Code

সামাজিক অনুষ্ঠানের নামেও চাঁদা নেয়, না দিলে নির্যাতন। আমরা এখন রাস্তায়, বাড়ি ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।’

সমাবেশে রানী বাসফোরের কণ্ঠে উঠে আসে এক আর্তি “আমাদের বাড়ি ফেরার অধিকার ফিরিয়ে দিন।’ হৈমন্তী আর তার সহযোগীদের গ্রেফতার না হলে কলোনিতে শান্তি ফিরবে না।’ এই ঘটনার মধ্য দিয়ে রংপুরের হরিজন সমাজের এক গভীর ক্ষত আবার উন্মোচিত হলো।

অর্থের বিনিময়ে জীবনযাপন, সুদের ফাঁদ, আর প্রশাসনিক উদাসীনতা—সব মিলে এই মানুষগুলো যেন নিজেদেরই দেশে পরবাসী হয়ে পড়েছেন। হয়তো আজ বা কাল তারা আবার কলোনিতে ফিরবে, কিন্তু ভয় ও অবিশ্বাসের সেই দেয়াল কি ভাঙা সম্ভব?

Manual2 Ad Code

রংপুর সদর হাসপাতাল হরিজন কলোনির নিভু আলোয় আজও ভেসে বেড়ায় সেই প্রশ্ন-‘আমরা কি আমাদের ঘরে ফিরতে পারব?’

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code