১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রংপুরের ঈদগাহ ময়দানে আট দলের সমাবেশ: প্রতিশ্রুতির ভাষণ এবং ‘আরেক যুদ্ধের’ আহ্বান

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৯:২২ অপরাহ্ণ
রংপুরের ঈদগাহ ময়দানে আট দলের সমাবেশ: প্রতিশ্রুতির ভাষণ এবং ‘আরেক যুদ্ধের’ আহ্বান

Manual8 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি

দুপুরের রোদ তখন শহরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের ওপর। ভিড় জমতে শুরু করেছে—পায়ের আওয়াজ, পতাকা হাতে অনেকেই, মাইকে কোরআন তেলাওয়াতের গম্ভীর ঢেউ—সব মিলিয়ে এক ধরনের প্রতীক্ষা তৈরি হয়। রংপুরে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দলের বিভাগীয় সমাবেশ। পাঁচ দফা দাবি—জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, নির্বাচনের আগে গণভোট, এবং দেশে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির ঘোষণা—এই সমাবেশকে শুধু রাজনৈতিক জমায়েত নয়, বরং এক ধরনের পর্ব।

সূচনার দৃশ্য: প্রত্যাশার মঞ্চে আট দল

দুপুর পৌনে দুইটা। তেলাওয়াত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠের ভিড় স্থির হয়ে যায়। শুরুর বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের রংপুর মহানগর সভাপতি নুরুল হুদা বলেন, ‘জুলাই সনদের পর জনগণ নিজের অধিকার ফেরানোর লড়াইয়ে নেমেছে। আজকের এই সমাবেশ তারই প্রতিফলন।’
ইসলামী আন্দোলনের রংপুর মহানগর সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান পিয়াল মাইকে উঠে বলেন, ‘এই আন্দোলন কারও বিরুদ্ধে নয়—ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য।’
জামায়াতে ইসলামীর মহানগর আমির এটিএম আজম খান ও জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী যুক্ত করেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া উপায় নেই।’
প্রতিবেদকের অদৃশ্য চোখে দেখা যায়—মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মানুষের মুখে ক্লান্তি, কৌতূহল, আবার কোথাও কোথাও তীব্র উত্তেজনা। যেন এই সমাবেশ শুধু বক্তব্য নয়—নতুন দিকনির্দেশনার অপেক্ষা।

প্রধান অতিথির ভাষণ: পরিবর্তনের ডাক

সমমনা আট দলের উদ্যোগে সমাবেশের প্রধান অতিথি ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম মঞ্চে ওঠেন। তার কণ্ঠ মাইকের ভেতর দিয়ে সোজা মাঠের নড়াচড়া থামিয়ে দেয়।
তিনি বলেন—’দেশে যে রাজনৈতিক ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছে, তা পুনর্গঠনের দায়িত্ব জনগণের। ঈমান, ন্যায়বিচার আর জনগণের মতামতকে সামনে রেখে এগোতে হবে।’

Manual2 Ad Code

মঞ্চে উত্তেজনার মুহূর্ত: মুজিবুর রহমানের ‘আরেক যুদ্ধ’

বিকেলের দিকে মঞ্চে ওঠেন সমাবেশের সভাপতি, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তার প্রথম বাক্যই মাঠের বাতাস বদলে দেয়—”জুলাই আন্দোলনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। আরেকটা যুদ্ধ বাকি আছে—ইসলাম কায়েম করার যুদ্ধ।”

দর্শক সারি থেকে হাত উঁচু করে সাড়া দেন অনেকেই। মুজিবুর রহমান থামেন না—“বদর, উহুদ, খন্দক—সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে জীবন দিয়ে কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেই আদর্শে আমাদেরও দাঁড়াতে হবে। হাত উঠাইয়া আল্লাহকে দেখান—আমরা প্রস্তুত আছি।
মাঠজুড়ে তখন একধরনের আবেগময় উত্তালতা। কারও চোখে দৃঢ়তা, কারও চোখে সংশয়।
মুজিবুর রহমান বলেন—“মানুষের কল্যাণ ছাড়া কোনো রাজনীতি টেকেনা। ৫৪ বছর ধরে সরকারগুলো ব্যক্তিগত স্বার্থ দেখেছে, জনগণের কল্যাণ দেখেনি।
তার কণ্ঠের ভেতর অভিযোগ, হতাশা, আবার প্রতিশ্রুতিও। তিনি যোগ করেন—’আমরা দুনিয়ার কল্যাণ করব, আখিরাতের কল্যাণও। সেজন্য জীবন দিতে হলেও দেব।
ন্যায়ের রাজনীতি—এই শব্দটি বারবার ফিরছে মঞ্চের নেতা ও বক্তাদের বক্তব্যে। কিন্তু মাঠের মানুষের চোখে প্রশ্ন ভাসে—ন্যায় কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? যুদ্ধের আহ্বান কি সমাধান, নাকি আবার নতুন দ্বন্দ্বের সূচনা?

ভিড়ের প্রস্থান, প্রশ্নের ছায়া

Manual3 Ad Code

সন্ধ্যার আগে ভিড় একে একে মাঠ ছাড়তে থাকে। পতাকা গুটিয়ে নেয়া হয়। মাইকের শব্দ কমে আসে।
রোদ যখন হেলে পড়ে, তখন মাঠজুড়ে পড়ে থাকে ধুলোর গন্ধ এবং মানুষের কথোপকথনের ভাঙা ভাঙা প্রতিধ্বনি।

প্রতিবেদকের নীরব পর্যবেক্ষণ বলে—এটি শুধু আট দলের সমাবেশ ছিল না। এ ছিল দাবির মঞ্চ, ধর্মীয় আবেগের প্রবাহ, রাজনৈতিক হতাশার উন্মোচন
এবং এক ভবিষ্যৎ সংগ্রামের রূপরেখা।

Manual1 Ad Code

সমাবেশ শুরু হয়েছিল তেলাওয়াতের শব্দে—নির্দেশনার আহ্বানে। শেষও হলো আরেক আহ্বানে—যুদ্ধের, পরিবর্তনের, ন্যায়ের প্রতিশ্রুতিতে।
রংপুরের সেই ঈদগাহ মাঠ যেন দিনের আলোয় রাজনীতির নতুন অধ্যায় দেখল।

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code