২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শুকিয়ে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে ইরাকের টাইগ্রিস নদী

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫, ০৯:৫৪ অপরাহ্ণ
শুকিয়ে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে ইরাকের টাইগ্রিস নদী

Manual3 Ad Code

স্বপ্না শিমু স্টাফ রিপোর্টার

আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাচ্ছে ইরাকের টাইগ্রিস নদী (আরবিতে একে দজলা বলা হয়)। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই যদি জরুরি পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তাহলে এর তীরে বসবাসকারী প্রাচীন সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন আমূল বদলে যাবে।

যা স্থানীয়দের ক্রমেই উদ্বিগ্ন করে তুলছে। আস্তো আস্তে শুকিয়ে যাচ্ছে ইরাকের টাইগ্রিস নদী। টাইগ্রিস নদীতীরে বাস করে এমন প্রাচীন একটি সম্প্রদায়ের নেতা শেখ নিধাম ক্রেইদি আল সাবাহি। তিনি কেবল প্রবহমান নদীর পানি ব্যবহার করেন।

Manual4 Ad Code

৬৮ বছর বয়সি এই ধর্মগুরু জানান, টাইগ্রিস নদীর পানি পান করে তিনি কখনও অসুস্থ হননি এবং তিনি বিশ্বাস করেন, নদীর পানি যতক্ষণ প্রবাহিত হচ্ছে ততক্ষণ তা পরিষ্কার। কিন্তু তার আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে এই প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

Manual2 Ad Code

টাইগ্রিস নদী মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। নদীটিকে বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে এর তীরে বসবাসকারী প্রাচীন সম্প্রদায়গুলোর জীবনযাত্রার মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।

দক্ষিণ ইরাকের আমরাহ শহরে নদীর তীরে বসবাসকারী মান্দিয়ান ধর্মীয় নেতা শেখ নিধাম বলেন, ‘পানি নেই, জীবনও নেই।’ মান্দিয়ানরা হলো বিশ্বের প্রাচীনতম জ্ঞানবাদী ধর্মগুলোর মধ্যে একটির সদস্য। এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ ইরাক, বিশেষ করে মেসান প্রদেশ তাদের মাতৃভূমি। প্রাদেশিক রাজধানী আমরাহ টাইগ্রিস নদীর চারপাশে গড়ে উঠেছে। পানি তাদের বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু এবং জীবনের প্রতিটি বড় ঘটনায় আচারগত শুদ্ধিকরণ প্রয়োজন হয়।

Manual5 Ad Code

বিবাহ অনুষ্ঠান শুরু হয় পানি দিয়ে এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে মান্দিয়ানদের চূড়ান্ত শুদ্ধির জন্য নদীতে নিয়ে যেতে হয়। শেখ নিধাম বিষয়টির ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমাদের ধর্মের জন্য পানির গুরুত্ব বাতাসের মতো। পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব থাকবে না। সৃষ্টির শুরুতে আদম ছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানুষ।

Manual7 Ad Code

আদমের আগে পানি ছিল এবং পানি ছিল আদমকে সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর মধ্যে একটি।’ টাইগ্রিস হলো সেই দুটি বিখ্যাত নদীর মধ্যে একটি, যা মেসোপটেমিয়াকে (ইরাকের প্রাচীন নাম) ঘিরে রেখেছে। নদীটি দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে উৎপন্ন হয়ে ইরাকের দুটি বৃহত্তম শহর মসুল ও বাগদাদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইউফ্রেটিসের (আরবিতে ফোরাত বলা হয়) সঙ্গে মিলিত হয়।

এই নদীগুলোর তীরেই বিশ্বের ইতিহাস পরিবর্তিত হয়েছিল।এখানে প্রথম বড় আকারের কৃষির বিকাশ ঘটে, প্রথম লেখালেখি শুরু হয় এবং চাকার আবিষ্কার হয়।

বর্তমানে টাইগ্রিসের পানি সেচ, পরিবহন, শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। সেই সঙ্গে এর অববাহিকায় বসবাসকারী আনুমানিক ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের পিপাসা মেটায়। গত কয়েক দশকে নদীর স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে।

নদীর পানির পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। ৩০ বছরে তুরস্ক টাইগ্রিসের ওপর প্রধান বাঁধ নির্মাণ করেছে, যার ফলে বাগদাদে পৌঁছানো পানির পরিমাণ ৩৩ শতাংশ কমে গেছে। ইরাকের অভ্যন্তরেও পানির অতিরিক্ত ব্যবহার হয়, বিশেষ করে কৃষিখাতে যা দেশের ভূপৃষ্ঠের জলের কমপক্ষে ৮৫ শতাংশ ব্যবহার করে। জলবায়ু সংকটও প্রভাব ফেলছে। ইরাকে বৃষ্টিপাত ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং দেশটি প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ খরার কবলে রয়েছে।

চলতি বছরের গ্রীষ্মে টাইগ্রিসে পানির স্তর এত নিচে নেমে গিয়েছিল যে, মানুষ সহজেই হেঁটে নদী পার হতো।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code