১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

অতীতের বস্তাপচা রাজনীতি পায়ের নিচে ফেলতে চাই: জামায়াত আমির

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৮:২০ অপরাহ্ণ
অতীতের বস্তাপচা রাজনীতি পায়ের নিচে ফেলতে চাই: জামায়াত আমির

Manual2 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি

ভোরের শীতল বাতাসে বিজয় দিবসের লাল-সবুজ পতাকা যখন রাজধানীর আকাশে ধীরে ধীরে দুলছিল, তখন মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দিকে ছুটে চলা তরুণদের পায়ের শব্দে যেন এক ধরনের অদৃশ্য প্রশ্ন প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল—বাংলাদেশের রাজনীতি কোন পথে?

সেই প্রশ্নের মাঝখানেই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান ঘোষণা দিলেন, “অতীতের বস্তাপচা রাজনীতি পায়ের তলে ফেলতে চাই।”

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘যুব ম্যারাথন’-এর সূচনালগ্নে দেওয়া তাঁর বক্তব্য ছিল একাধারে প্রত্যয়ী, নাটকীয় এবং রাজনৈতিক বার্তায় ঠাসা।

সকাল ৮টার কিছু আগে কাঁটাবন থেকে শুরু হওয়া ম্যারাথনটি সায়েন্সল্যাব ও ধানমন্ডি পেরিয়ে শেষ হয় মানিক মিয়া এভিনিউতে—যেখানে ইতিহাস, ক্ষমতা ও জনতার প্রতীকী মিলন ঘটে বারবার।

ম্যারাথন-পূর্ব সমাবেশে জামায়াত আমিরের কণ্ঠে ছিল স্পষ্ট ঘোষণা। তিনি বলেন, “অতীতের বস্তাপচা সমস্ত রাজনীতিকে পায়ের তলে ফেলে দিতে চাই। আমাদের নতুন রাজনীতি করতে হবে। এই রাজনীতি বাংলাদেশে অচল। এই রাজনীতিতে (পুরনো ধারার রাজনীতি) বাংলাদেশে যারা পাহারা দেবে, তারা অচল মালে পরিণত হবে।”

Manual2 Ad Code

কথাগুলো উচ্চারিত হচ্ছিল এমন এক ভঙ্গিতে, যেন তিনি শুধু বক্তৃতা দিচ্ছেন না—বরং সময়ের সঙ্গে বিতর্কে নামছেন।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, এখন প্রয়োজন এমন রাজনীতি, “যে রাজনীতি দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে হবে; যে রাজনীতি দুর্নীতি, চাঁদাবাজ, দখলদার, মামলাবাজদের বিপক্ষে হবে।”

শব্দগুলো এখানে শুধু শব্দ নয়—এগুলো হয়ে উঠছিল অভিযোগ, প্রতিজ্ঞা এবং হুঁশিয়ারি।

Manual4 Ad Code

ড. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “আমরা আমাদের দলের বিজয় চাচ্ছি না, আমরা ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাচ্ছি। এই বিজয়ই আমাদের দলের বিজয় হবে। এই বক্তব্যে তিনি দলীয় সীমানা ছাড়িয়ে একটি বৃহত্তর জাতীয় আখ্যান নির্মাণের চেষ্টা করেন।

তাঁর কণ্ঠে তখন আশ্বাসও আছে, চ্যালেঞ্জও আছে। তিনি বলেন, ‘বিজয়ের পথে বাধার যত দেয়াল তোলা হবে, যুবকেরা তা লাথি মেরে চুরমার করে দেবে। কোনো ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না।

সমাবেশের ভিড়ের ভেতর থেকে তখন যেন আরেকটি নীরব প্রশ্ন উঠে আসে—এই যুবকেরা কি সত্যিই সেই দেয়াল ভাঙতে পারবে? বক্তা অবশ্য দ্বিধার জায়গা রাখেননি। ‘কেউ যেন নিজেকে অতি ধূর্ত মনে না করে,’ বললেন তিনি, ‘জনগণ এখন নিজের বুঝ বুঝতে শিখেছে। কাউকে আর ছাড় দেওয়া হবে না।

কালো টাকা ও অদৃশ্য শক্তির প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমির বলেন, ‘কোনো কালো হাত সামনের দিকে এগিয়ে এলে সেই হাত জনগণ অবশ করে দেবে।

কালো টাকার বিনিময়ে যারা মানুষকে কেনার দুঃসাহস দেখাবে, তাদের ছাই দেখাবে। তাঁর এই বক্তব্যে রূপক আর হুঁশিয়ারি এক হয়ে যায়—কালো হাত এখানে শুধু ব্যক্তি নয়, একটি ব্যবস্থার প্রতীক।

বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে তিনি আগামী নির্বাচনকে ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ হিসেবে তুলে ধরেন। তাঁর ভাষায়, ‘আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের মোড়ক উন্মোচন হবে।

Manual5 Ad Code

এই বাক্যেই যেন শুরু আর শেষ মিলেমিশে যায়—বিজয় দিবসের স্মৃতি থেকে ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি পর্যন্ত।

ম্যারাথন তখন এগিয়ে চলেছে শহরের বুক চিরে। তরুণদের ঘামে, স্লোগানে আর পদচারণায় ভেসে যাচ্ছে রাজপথ। প্রতিবেদক দূরে দাঁড়িয়ে শুধু দেখেন—এই দৃশ্য কি নিছক আয়োজন, নাকি রাজনীতির নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত?

Manual1 Ad Code

উত্তর এখনো অমীমাংসিত। তবে এদিনের সকালে একটি কথা স্পষ্ট—রাজনীতির ময়দানে পুরনো ও নতুনের সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে, আর সেই সংঘর্ষের সাক্ষী হয়ে রইল বিজয় দিবসের ঢাকা।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code