 
ডেস্ক রিপোর্ট রংপুর
রংপুরের আকাশে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল, শাপলা চত্বরে সন্ধ্যার বাতাসে মাইকের শব্দ মিলেমিশে এক ধরনের প্রত্যাশার সুর । ভেতরে—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগর শাখার দলীয় কার্যালয়ের হলরুমে রুকন সম্মেলন।
বাইরে ব্যস্ত নগরী, আর ভেতরে এক ধরনের রাজনৈতিক আত্মসমালোচনার ভাষণ। ঠিক সেখানেই কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বললেন দৃঢ় কণ্ঠে—”জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের কোনো বিকল্প নেই।’ গণভোটের মাধ্যমেই জাতীয় সনদ আইনি ভিত্তি পাবে, আর সেই ভিত্তিতেই দাঁড়াবে ন্যায় ও সংস্কারনির্ভর রাষ্ট্র।’
তার বক্তব্যের ভেতরে ছিল এক ধরনের আত্মবিশ্বাস—যেন দেশের রাজনীতির জটিল গলিপথে গণভোটই হতে পারে মুক্তির রাস্তা।
২১ অক্টোবর, মঙ্গলবারের সন্ধ্যা। মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এখন সময়ের দাবি।’
তিনি জানান, ‘বর্তমান সরকারের উদ্যোগে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জাতীয় কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসেছে এটি ইতিবাচক দিক’,বললেন তিনি। ইতোমধ্যে ৩৩টি রাজনৈতিক দল জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়েছে এবং বহু দল জুলাই সনদে সাক্ষর করেছে। এটি ঐক্যের নতুন দরজা খুলে দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৮৪টি প্রস্তাবের মধ্যে বহু প্রস্তাবে দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। এটি শুধু কাগজে কলমে নয়, বরং রাজনৈতিক পরিপক্বতার নতুন দিগন্ত।’ তার কণ্ঠে তখন শোনা যাচ্ছিল আত্মসমালোচনার স্বর—”জামায়াতে ইসলামী সবসময় আত্মসমালোচনার পক্ষে। অন্য দলের সমালোচনাকে আমরা শত্রুতা নয়, বরং নিজেকে নতুন করে গড়ার সুযোগ হিসেবে দেখি। অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’ হালিম বলেন, ‘আমাদের সংগঠন একটি সুসংগঠিত ও নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক কাঠামো।
প্রতি তিন বছর পর আমিরে জামায়াতের নির্বাচন হয়—এটি শুধু নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়, বরং দায়িত্ব ও আমানতের নবায়ন।’ তিনি জানান, ২০২৬-২০২৮ কার্যকালের জন্য নতুন আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং তা ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।
তার ভাষায়, ‘এই নির্বাচনে এমন এক নেতৃত্ব আসবে, যিনি আল্লাহভীরু, যোগ্য ও কর্মীবান্ধব। যিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করবেন। এজন্য আমি সবার দোয়া চাই।’ হ
লরুমের ভেতরে তখন নীরব মনোযোগ—কেউ কেউ নোট নিচ্ছেন, কেউ মাথা নাড়ছেন। আলোচনায় বারবার ফিরে আসছিল ‘ঐক্য’ আর ‘সংস্কার’ শব্দ দুটি—যেন রাজনৈতিক অন্ধকারে একটি প্রদীপের মতো।
সভায় সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর আমীর মাওলানা এটিএম আজম খান। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, মহানগর সেক্রেটারি কেএম আনোয়ারুল হক কাজল, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী, আল আমিন হাসান এবং শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাউসার আলী।
সভা শেষে হালিমের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি যেন রয়ে গেল উপস্থিতদের মুখে মুখে— “গণভোটই জাতীয় ঐক্যের সেতুবন্ধন।” সমাপ্তির পর রাতের আকাশে উঠেছে পূর্ণ চাঁদ—রংপুরের আকাশে যেন এক প্রতীকী আলোকরেখা, যা রাজনৈতিক বিভেদের অন্ধকারে আলোর সম্ভাবনা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
	
		Sharing is caring!