
শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া থেকেঃ
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন কাঁচা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম, আর দোকানদারদের নেই কোনো নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা।
বাজার মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা যে-যেভাবে চাইছে, ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। ফলে নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে সংসার চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে।
উখিয়ার প্রধান বাজারগুলো, কোটবাজার, উখিয়া সদর বাজার ও কুতুপালং বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দামে প্রতিদিন পণ্য বিক্রি হচ্ছে। একদিন এক রকম দাম, পরের দিন দ্বিগুণ—কোনো নিয়মনীতি নেই।
ক্রেতাদের অভিযোগ, এসব বাজারে প্রশাসনের কোনো সক্রিয় নজরদারি নেই বললেই চলে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছে।
কোটবাজার সংলগ্ন পশ্চিম রত্নাপালংয়ের স্থানীয় এনজিও কর্মী মিল্কী বড়ুয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চালানো এখন সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। এক কেজি সবজি কিনতে গিয়েই মনে হয় পকেট ফাঁকা হয়ে যাবে। নিত্যপণ্যের দাম এত বেশি যে পরিবারের চাহিদা মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
উখিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো: সেলিম বলেন, আমার আয়ের পরিমাণ সীমিত। বাজারে গেলে দেখি সবজির দাম প্রতিদিন নতুনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এত উচ্চ মূল্যে বাজার করা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য ভীষণ কষ্টকর।
মানবিক কর্মী মুহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, প্রতিদিন বাজারে ঢুকলেই আতঙ্ক লাগে। পকেটে যে টাকা থাকে, তা দিয়ে সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা সম্ভব হয় না। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে চলতে হয়। যদি প্রশাসন বাজার নিয়ন্ত্রণে না আনে, তাহলে সাধারণ মানুষের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নুর মোহাম্মদ সিকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, উখিয়ার বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো দাম নির্ধারণ করছে। এতে ভোক্তারা নিত্যদিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসনের উচিত নিয়মিত বাজার মনিটরিং টিম গঠন করা এবং প্রতিটি দোকানে বাধ্যতামূলক মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখা। শুধু তাই নয়, যেসব ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়বে।
ক্রেতা ও স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী বাজার তদারকি কমিটি গঠন করা হোক, যারা প্রতিদিন বা অন্তত সপ্তাহে কয়েকবার বাজারগুলোতে গিয়ে মূল্য তালিকা পরীক্ষা করবেন। একই সঙ্গে ক্রেতা-সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালাতে হবে যাতে তারা অতিরিক্ত দামে পণ্য কিনে প্রতারিত না হন।
উখিয়ার কাঁচা বাজার এখন ক্রেতাদের জন্য আতঙ্কের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন মূল্যে সবজি বিক্রি হওয়ায় গরিব-অসহায় পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ছে।
ক্রেতাদের প্রত্যাশা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেবে এবং বাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনবে। অন্যথায় নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
Sharing is caring!