২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩রা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

কুয়াশার চাদরে ঢাকা কুড়িগ্রাম, ১২ ডিগ্রিতে নেমে জনজীবন স্থবির

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫, ০২:৫৬ অপরাহ্ণ
কুয়াশার চাদরে ঢাকা কুড়িগ্রাম, ১২ ডিগ্রিতে নেমে জনজীবন স্থবির

Manual5 Ad Code

লোকমান ফারুক, রংপুর

ভোরের কুড়িগ্রাম যেন ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল। চারপাশে কেবল ধূসরতা—কুয়াশার ঘন চাদরে ঢাকা রাস্তা, মাঠ, ঘরবাড়ি। হিমেল বাতাস শরীর ছুঁয়ে জানিয়ে দিচ্ছিল, শীত শুধু আবহাওয়ার খবর নয়—এটি মানুষের জীবনে নেমে আসা এক নীরব সংকট।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় কুড়িগ্রাম জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সংখ্যাটি কাগজে ছোট, কিন্তু এর অভিঘাত বড়। রাতভর কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে জেলাজুড়ে জনজীবন প্রায় থমকে যায়।

ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলতে দেখা যায় বাস, ট্রাক ও ছোট যানবাহন।

গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। ভোরের দিকে পুরো জেলা এমনভাবে কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যে দূরের গাছ, ঘর কিংবা মানুষ—সবই মিলিয়ে যায় একরকম ছায়াময় অচেনা দৃশ্যে।

এই শীতের সবচেয়ে ভারী বোঝা বইছেন নিম্নআয়ের মানুষ। দিনমজুর, খেটে খাওয়া শ্রমিক আর চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য সকাল মানেই কাজের ডাক। কিন্তু কনকনে ঠান্ডা সেই ডাককে থামিয়ে দেয়।

Manual8 Ad Code

অনেকেই সকালে কাজে বের হতে পারেননি। কারও গায়ে পাতলা জামা, কারও পায়ে খালি চামড়া—শীত এখানে কেবল প্রকৃতির নয়, আর্থসামাজিক বৈপরীত্যের নগ্ন প্রকাশ।

Manual3 Ad Code

স্থানীয় বাসিন্দা মেনতাজ আলী ভোরের শীতে কাঁপতে কাঁপতে বলেন, “কয়েকদিন তেমন ঠান্ডা ছিল না। আজ হঠাৎ করেই শীতল বাতাস আর ঠান্ডা শুরু হয়েছে। বাতাসের কারণে জনজীবন অনেকটাই কাহিল হয়ে পড়েছে।”

তার কথার ভেতরে লুকিয়ে থাকে এক অঘোষিত প্রশ্ন—এই শীতে কারা টিকে থাকবে, আর কারা আরও পিছিয়ে পড়বে?

Manual4 Ad Code

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী কয়েকদিন শীত ও কুয়াশার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে এবং জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Manual7 Ad Code

সংখ্যা ও পূর্বাভাসের ভাষা ঠান্ডা। কিন্তু বাস্তবতা উষ্ণ আশ্রয়ের খোঁজে থাকা মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভরা।

দিনের আলো বাড়লেও কুয়াশা পুরোপুরি সরে না।
কুড়িগ্রাম তখনও শীতের সঙ্গে এক নীরব লড়াইয়ে ব্যস্ত। সূর্য উঠলেও উষ্ণতা পৌঁছায় না সবার শরীরে। কুয়াশার শুরু যেমন নিঃশব্দ, শীতের এই দুর্ভোগও তেমনি—চুপচাপ, কিন্তু গভীর।

এই জেলার শীত তাই কেবল ১২ ডিগ্রির হিসাব নয়। এটি বেঁচে থাকার প্রশ্ন, বৈষম্যের আয়না—আর প্রতিদিনের সংগ্রামের এক ঠান্ডা বাস্তবতা।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code