বিশেষ প্রতিনিধি
১১ ডিসেম্বর ২০২৫ জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ঘোষণা করেছেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও তৃতীয় গণভোটের তফসিল।
কাগজে-কলমে এটি নিছক সময়সূচি, কিন্তু অভিজ্ঞ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে প্রতিটি তারিখই যেন আলাদা সংকেত—ক্ষমতার গোপন সমীকরণে লেখা কোনো নিঃশব্দ বার্তা। সিইসি যে সময়সূচি পড়লেন, সেটি ছিল এমনভাবে সাজানো যাতে প্রতিটি ধাপে তৈরি হয় চাপ, প্রতিযোগিতা এবং হিসাব–নিকাশের নতুন পর্ব।
২৯ ডিসেম্বর—মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন।
৩০ ডিসেম্বর–৪ জানুয়ারি—যাচাই–বাছাই।
১১ জানুয়ারি—রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের শেষ সময়।
১২–১৮ জানুয়ারি—আপিল নিষ্পত্তি।
২০ জানুয়ারি—প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়।
২১ জানুয়ারি—চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ।
২২ জানুয়ারি—নির্বাচনী প্রচারের আনুষ্ঠানিক শুরু।
১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭:৩০—প্রচারের শেষ সময়।
১২ ফেব্রুয়ারি—৩০০ আসনে ভোটগ্রহণ এবং একইসঙ্গে তৃতীয় গণভোট। এই তারিখগুলো যেন ক্যালেন্ডারের সাধারণ সময়সূচি নয়—বরং রাজনৈতিক দাবার চাল।
২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন জমা, আর ঠিক পরদিন থেকে যাচাই–বাছাই—এমন সংকুচিত ব্যবধানের মধ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের লড়াই আরও কঠিন, আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে।
সিইসির ঘোষণা শুনে মনে হচ্ছিল তিনি শুধু তথ্য দিচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির—এবারের জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একদিনেই। এটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, নাকি রাজনৈতিক প্রয়োজন—প্রশ্নটি বাতাসে ভাসমান।সিইসির ভাষণ তা স্পষ্ট করেনি, তবে সময় বাড়ানোর কথাটি ইঙ্গিত দিয়েছে প্রস্তুতির কঠোরতা আর গোপন চাপের দিকেই।
২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর যখন ২২ জানুয়ারি প্রচার শুরু হবে, তখন দেশের রাজনৈতিক বাতাস আরও ভারী হবে—চাপ, দরকষাকষি, জোটবদল, গোপন বৈঠক—সবই চলবে পর্দার সামনে–পেছনে।
১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটায় প্রচার বন্ধ হবে ঠিকই, কিন্তু মাঠের উত্তাপ যে থেমে যাবে—এমন প্রত্যাশা নেই। ৩০০ আসনে ভোট—তার সঙ্গে একই দিনে একটি জাতীয় গণভোট। দুটি সিদ্ধান্ত, একদিনে।
সিইসির ভাষণের শেষে টানা নীরবতা যেন সেই বাস্তবতাটিই মনে করিয়ে দিচ্ছিল—১২ ফেব্রুয়ারি কেবল ভোটের দিন নয়; এটি ক্ষমতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।
Sharing is caring!