১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হাসিনার নয়াদিল্লিতে অবস্থান নিয়ে যা বললেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০২:৫৭ অপরাহ্ণ
হাসিনার নয়াদিল্লিতে অবস্থান নিয়ে যা বললেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

Manual8 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি

নয়াদিল্লির শীতল ডিসেম্বর দুপুরে আলোঝলমলে একটি স্টুডিও—এনডিটিভির অনুষ্ঠানে কথার গতিপথ হঠাৎই মোড় নিল বাংলাদেশে।

উপস্থাপকের সরল প্রশ্নে তৈরি হল এক জটিল নৈঃশব্দ্য—ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে যে রহস্য, তারই একটি অংশ যেন উন্মোচিত হওয়ার অপেক্ষায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সংক্ষিপ্ত বিরতির পর ধীর কণ্ঠে বললেন—’এটি সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’ বক্তব্যটি সরল মনে হলেও তার ভেতরে লুকিয়ে আছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিল ছায়া, অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার অগোচর শব্দ, আর কূটনীতির অত্যন্ত সাবধানী পদচিহ্ন। ‘

Manual7 Ad Code

পরিস্থিতি তাকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে’ শেখ হাসিনা কেন ভারতে, কতদিন থাকবেন, কোন শর্তে এসেছেন—প্রশ্নগুলো এখন ঢাকা থেকে দিল্লি পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। জয়শঙ্কর বললেন,”তিনি যেসব পরিস্থিতিতে ভারতে এসেছেন, সেই পরিস্থিতিগুলোই এখন তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে।”

Manual3 Ad Code

কথাটি বলার সময় তার স্বর ছিল না অভিযোগপরায়ণ, না অতিরিক্ত সমর্থনমূলক—বরং রাষ্ট্রীয় কূটনীতির জটিল ভারসাম্য। যেন তিনি স্পষ্টও বললেন, আবার ধোঁয়াটাও রাখলেন।

শেখ হাসিনা ‘ইচ্ছা করলে যতদিন খুশি থাকতে পারবেন কি না’—প্রশ্নটি করা হলে জয়শঙ্কর আরেকটি দ্ব্যর্থহীন-দ্ব্যর্থযুক্ত মন্তব্য রাখলেন: ‘এটি ভিন্ন বিষয়… ভবিষ্যত নির্ধারণে পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সিদ্ধান্ত তাঁকেই নিতে হবে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আলোচনার মাঝেই জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন—’বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জরুরি।

Manual2 Ad Code

এটি শুধু কূটনৈতিক মন্তব্য নয়—ঢাকায় চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তন, রূপান্তর এবং অনিশ্চয়তাকে ইঙ্গিত করে এমন সূক্ষ্ম বার্তা।

যেন তিনি বলতে চাইছেন, দিল্লি আলোচনায় রাখবে না কোনো বিভাজন, বরং নজর রাখছে প্রক্রিয়ায়—কোনো একক ব্যক্তির ওপর নয়। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ধারাবাহিকতা নিয়ে। ‘আমরা বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করি… জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায় এমন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই স্থিতির ভিত্তি,—বললেন তিনি।

তার কথায় যেন দুই দেশের দীর্ঘ বন্ধুত্ব, অস্থিরতার মাঝেও টিকে থাকা আস্থার সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতের স্পন্দন একসাথে মিলেমিশে প্রতিফলিত হলো।

জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে যে সরকারই আসুক, তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে পরিপক্ব ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নেবে—এটাই আমাদের আশা।

Manual8 Ad Code

স্টুডিওর আলো স্থির, ক্যামেরা তাকিয়ে—কিন্তু বাতাসে জমে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর নেই—শেখ হাসিনার ফেরার পথ কেমন?:ভারত তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিচ্ছে কি? ঢাকার ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে?

জয়শঙ্কর সেসব প্রশ্ন ছুঁয়ে গেলেন, কিন্তু ধরে রাখলেন না—কূটনীতির নিয়মে তিনি রেখেছেন স্পেস, আর রেখে গেছেন বিস্তর পাঠোদ্ধারের সুযোগ।

শেষ পর্যন্ত স্পষ্ট হলো শুধু একটি বিষয়— শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান; না দিল্লির সিদ্ধান্ত, না ঢাকার নির্দেশ—বরং তার নিজের নির্বাচন, কিন্তু সেই নির্বাচনের পেছনের পরিস্থিতি এখনও ছায়ায় আচ্ছন্ন। কূটনীতি তাই আবারও নীরবতার ভাষায় বলল— যেসব প্রশ্নের উত্তর সময় দেয়, সেগুলো কখনোই চাপ দিয়ে বের করা যায় না।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code