১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জাতিসংঘ ভাষণ

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:৩০ অপরাহ্ণ
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জাতিসংঘ ভাষণ

Manual6 Ad Code

শেখ আসাদুজ্জামান আহমেদ টিটু

Manual7 Ad Code

আজকের এই দিনে, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে আছে।

স্বাধীনতার মাত্র আড়াই বছরের মাথায় বিশ্বপরিসরে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে মর্যাদার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করা ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর বঙ্গবন্ধু সেই চ্যালেঞ্জকেই সুযোগে রূপান্তরিত করেছিলেন তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে। জাতিসংঘের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম নেতা, যিনি জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়েছেন।

এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই তিনি যেনো বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেন— বাংলা কেবল একটি জাতির মাতৃভাষা নয়, এটি আত্মত্যাগ, সংগ্রাম এবং মর্যাদার প্রতীক।

রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভাষাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দ্বিধাহীন, তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ ছিল সুস্পষ্ট এবং আত্মবিশ্বাসের সুদৃঢ় প্রকাশ।

Manual1 Ad Code

ভাষণের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন: “সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।”

এই নীতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হয়ে ওঠে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক শান্তি, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতেই একটি স্থিতিশীল পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু বিশ্বশক্তিগুলোর অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধবাজ মানসিকতা ও আধিপত্য বিস্তারের নীতি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

Manual1 Ad Code

তাঁর মতে, যে অর্থ যুদ্ধের প্রস্তুতিতে অপচয় হচ্ছে, তা যদি দারিদ্র্য দূরীকরণ ও মানবকল্যাণে ব্যয় হতো, তবে পৃথিবী এক ভিন্ন রূপে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারতো। তিনি বিশেষভাবে তুলে ধরেন উন্নয়নশীল দেশগুলোর দুঃখ-দুর্দশা। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বৈষম্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ—এসব সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া কোনো পথ নেই।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ দুরবস্থার কথাও তিনি অকপটে জানান। বন্যা, খরা ও খাদ্য সংকটে বিপর্যস্ত একটি জাতি কীভাবে টিকে থাকার সংগ্রাম করছে, তা তুলে ধরে তিনি বিশ্ববাসীর সহানুভূতি ও সহযোগিতা কামনা করেন। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ছিল অটল আত্মবিশ্বাস।

তিনি ঘোষণা করেন, “আমার বাঙালিরা কষ্ট সহ্য করতে পারে, কিন্তু তারা মরবে না।” এই বাক্য শুধু বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামী মানসিকতার প্রকাশ নয়, বরং এক সদ্যজাত রাষ্ট্রের সাহসের সাথে এগিয়ে চলার প্রত্যয়ের প্রতীক। ১৯৭৪ সালের দেয়া সেই বক্তৃতা কেবল জাতিসংঘের মঞ্চে উচ্চারিত কিছু কথা নয়; এটি ছিল বাংলাদেশের স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং নীতির ঘোষণাপত্র।

Manual6 Ad Code

বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একটি শান্তিপ্রিয়, ন্যায্যতাবাদী ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত সেই দিনটি তাই শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে আছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code