১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আমার সন্তানকে হসপিটালাইজ হত্যা করেছে, আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই। সংবাদ সম্মেলনে মিরান’র বাবা

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ০৯:৩৮ অপরাহ্ণ
আমার সন্তানকে হসপিটালাইজ হত্যা করেছে, আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই। সংবাদ সম্মেলনে মিরান’র বাবা

Manual5 Ad Code

আমার সন্তানকে হসপিটালাইজ হত্যা করেছে, আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই। সংবাদ সম্মেলনে মিরান’র বাবা

Manual4 Ad Code

 

 

Manual3 Ad Code

জামরুল ইসলাম রেজা ::
আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। যে শিশুটি আজ মায়ের কোলে থাকার কথা, তাকে সাদা কাফনে মুড়িয়ে রেখে এসেছি মাটির ঘরে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুলে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আমার সন্তানটি আজ পরপারে। আজ চারদিন হল আমার স্ত্রী বাকরুদ্ধ। আমার স্বপ্নের সমাধি বিসর্জন দিয়ে আপনাদের সামনে দুটি কথা বলার জন্য এসেছি। সন্তানের মৃত্যু শোক কত যন্ত্রনার; কত কষ্টের সেটি ভুক্তভোগী মা বাবা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ভারি বোঝা হচ্ছে একজন পিতার কোলো সন্তানের নিতর দেহ।

আমি একজন সাধারন ব্যবসায়ী, আমার বাড়ি ছাতকের [হাজিপাড়া নোয়াগাও গনেশপুর গ্রামে] আমার ২২ মাস বয়সী ছেলে শিশু হামদান মিরান। গত ৬ অক্টোবর থেকে আমাশয় রোগে ভূগছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ অক্টোবর নিয়ে আসি রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে আনার পরও মিরান ছিল সুস্থ ও স্বাভাবিক। আমার কোলে উঠে ঘুরে বেরিয়েছে পুরো হাসপাতাল। হাসপাতালের অনেকেই তাকে আদরও করেছেন। মৃত্যুর আগেও সে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল। সে বার বার বলছিল এখান থেকে চলে যাওয়ার কথা। তখন বুঝতে পারিনি অবুঝ সন্তানের অনুভূতির কথা। এটাই যে আমার সন্তানের শেষ ইচ্ছে। যে সন্তানকে ইনজেকশন পুশ করার আগমুহূর্তে আমি আমার হাত দিয়ে মাছ দিয়ে ভাত খাওয়াইছি- সে সুস্থ স্বাভাবিক সন্তানকে লাশ হিসাবে আমার বহন করতে হবে- সেটা একজন পিতা হিসাবে মেনে পারছি না।

হাসপাতালে আনার পর তাকে আলট্রাসনোগ্রাম সহ সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু তার রোগ নির্ণয় করা যায়নি। প্রাথমিকভাবে তার আমাশয় ও ডায়রিয়ার চিকিৎসা চলছিল। গত ৯ অক্টোবর চিকিৎসাপত্রে কেওয়ান ইনজেকশন জিরো পয়েন্ট ৫ এমএম দেওয়ার কথা লিখে দেন চিকিৎসক অথচ নার্স ফার্মেসী থেকে কেটি-ওয়ান ইনজেকশন এনে দেওয়ার শ্লিপ দেন। আমি তাদের কথামত ইনজেকশনটি এনে দেই। দুপুর সোয়া ২টায় ইনজেকশনটি পুশ করা হয়। ইনজেকশন যখন পুশ করা হয় তখন আমার সন্তান চিৎকার দিয়ে ওঠে। তার মুখ কালচে হয়ে যায়। নিস্তেজ হওয়ার শুরু করে সমস্ত শরীর। ওয়ার্ডে অসংখ্য লোক সাথে সাথে জড়ো হয়ে যান। অনেকেই বলাবলি শুরু করেন কিছুক্ষণ আগেও বাচ্চাটাকে সুস্থ দেখলাম।

এরপর নার্স বিষয় টি ডাক্তারকে জানাতে বলে। ডাক্তার এসে বলেন, আমার ছেলের অবস্থা ভাল নয়, তাকে আইসিউতে নিতে হবে। এতে প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা লাগবে। আমি বলেছি যত টাকা লাগে আমার সন্তানকে বাঁচান। কিছুক্ষন পর তারা এসে জানায় আইসিউ খালি নেই। পাশে মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল সেখানে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে যাওয়ার আগেই আমার সন্তানের নড়াচড়া বন্ধ ছিল। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক জানালেন আমার আদরের সন্তানটি আর নেই। এরপর আমার ঘোর কাটে। আমি সন্তানের মৃত্যুর কারন খোঁজতে থাকি। চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশন আর নার্সের লেখা কাগজটি মিলিয়ে দেখি রাত দিন ফারাক। চিকিৎসক লিখে দিয়েছেন কে-ওয়ান আর নার্স লিখে দিয়েছেন কেটি-ওয়ান। হাসপাতাল কতৃপক্ষের এই ভুল ধরলে তারা সেটি অস্বীকার করেন। আমার প্রশ্ন ছেলেটি যখন মৃত্যু শয্যায় তখন তাদের আইসিউ কেন দেওয়া হলনা। কেন দূরের একটি হাসপাতালে পাঠানো হল। তারা বুঝতে পেরেছিলেন ভুল চিকিৎসায় শিশুটি মারা গেছে। তাই এখান থেকে দায় সরানোর কৌশল হিসাবে অন্য হাসপাতালে পাঠান বলে আমি এখন অনুধাবন করছি। তারা কেন সেখানে চিকিৎসা না করেই অন্য হাসপাতালে পাঠাল সেটি আমার বোধগম্য নয়।

সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুরা,
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার পরও বিষয়টি তারা অস্বীকার করতে থাকেন। তারা যখন বিষয়টি মানতে নারাজ তাই যে ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে আসি সেখানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ আমরা কালেকশন করি। তারা আমাদেরকে ফুটেজ না দিলেও ফুটেজটি ভিডিও ধারণ করে নিতে বলে। আমরা তাদের কথামত ভিডিও ফুটেজ নিয়ে চিকিৎসকদের দেখাই। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে আমি যে ইনজেকশন কিনে নিয়ে এসেছি সেটি কেটি-ওয়ান। তারা সেটিও মানতে নারাজ। এরপর নার্সের দেওয়া লেখা পেসক্রিপশনটিও তাদেরকে দেখাই তারপরও তারা বিষয়টি মানতে রাজি হননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন অবহেলা আমাকে ব্যথিত করে। তাই আর কোন মা বাবার কোল আর কোনো হামদান মিরান ভুল চিকিৎসায় প্রাণহানি না ঘটে সেজন্যই এই সংবাদ সম্মেলন।

সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুরা
বিষয়টি যখন তারা কোনভাবেই মানতে নারাজ, এরপর আমার স্ত্রীর ভাই ডা. তামিমকে বিষয়টি আমরা জানাই। তিনি বিষয়টি দেখে নার্সের ভুলের কারনে এমনটি হয়েছে বলে জানান। এই ইনজেকশনটি মূলত পটাশিয়াম কমে গেলে দেওয়া হয়। আর এটি দিতে হয় খুব ধীরে ধীরে স্যালাইনের মাধ্যমে। এটা বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তারপরও কতৃপক্ষ সেটি মানতে চায়নি। তারা বলেছে এটি তাদের ভুল নয়। আমি দৃঢ় চিত্তে বলতে চাই তারা আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই। প্রয়োজনে এই বিষয়টির শেষ দেখব।

Manual7 Ad Code

সম্মানিত সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আমার সংবাদ সম্মেলনের কারন- আর যাতে কোন মা বাবার কোল চিকিৎসা নিতে এসে ভুল চিকিৎসায় খালি না হয়। চিকিৎসার নামে আর কোনো হামদান মিরান যেনো এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের স্বীকার না হয় পুরো সিলেটবাসী দেশবাসীর কাছে আমার দাবী।

বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার সব কিছুতেই পরিবর্তন আনছে। কিন্তু আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় তেমন উন্নয়ন এখনো হয়নি। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর পর বিচার না পাওয়ার যে সংষ্কৃতি তৈরী হয়েছে সেটি থেকে আমরা মুক্তি চাই। যারা চিকিৎসার নামে কসাইখানা খুলে বসেছে তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেই দাবি জানাই।

Manual1 Ad Code

হারিয়ে যাওয়া হামদান মিরানকে আমি ফেরত পাবো না ঠিক, তবে রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত আরো অসংখ্য হামদান মিরান চিকিৎসা নিচ্ছে তারা কী আদৌও নিরাপদে সেবা নিচ্ছে? সিলেটবাসীর কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code