১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাগামহীন জন্মহার: পাঁচমুখী ভয়াবহ সংকটে দক্ষিণ সীমান্ত

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ১১:৩৫ অপরাহ্ণ
উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাগামহীন জন্মহার: পাঁচমুখী ভয়াবহ সংকটে দক্ষিণ সীমান্ত

Manual3 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি, (উখিয়া) কক্সবাজারঃ

Manual7 Ad Code

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন অস্বাভাবিক হারে শিশু জন্ম নেওয়ায় পরিস্থিতি নতুন এক ভয়াবহতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, নিরাপত্তা ঝুঁকি, আর্থিক সংকট, নাগরিকত্ব সংকট ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা- এই পাঁচমুখী সমস্যার বলয় এখন দক্ষিণ সীমান্তকে আরও অস্থির করে তুলেছে।

ক্যাম্পে বসবাসকারী প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে দুই লাখের মতো শিশু বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নিয়েও এখনো কোনো নাগরিক পরিচয় পাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্মহীনতা, অনিশ্চয়তা ও দাম্পত্য অবসরের কারণে রোহিঙ্গা পরিবারে সন্তানের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। অনেক পরিবারেই ৪ থেকে ৬ সন্তানের দেখা মিলছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সচেতনতা কর্মসূচি থাকলেও মাঠপর্যায়ে কার্যকারিতা কম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ক্যাম্পে বিশাল দুর্যোগ সৃষ্টি করবে।

আইএসসিজির তথ্যমতে, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি বছর প্রতিশ্রুত অনুদানের প্রায় অর্ধেকই পাওয়া যায়। ফলে খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা সহায়তায় ভয়াবহ ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে ক্যাম্পের বাইরে শ্রমবাজারে ঢুকে স্থানীয়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতা তৈরি করছে।

এতে উত্তেজনা বাড়ছে, বাড়ছে সামাজিক দ্বন্দ্ব। অনুদান সংকট ও কাজের অভাবে ক্যাম্পের তরুণদের বড় অংশ বেকার। নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের মতে, এ হতাশা তাদের অনেককে মানব পাচার, মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ক্যাম্পকেন্দ্রিক অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংঘাতও তীব্র হচ্ছে। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া প্রায় দুই লাখ শিশুর কোনো নাগরিকত্ব নেই। বাংলাদেশ তাদের স্বীকৃতি দিতে পারে না, মিয়ানমারও তাদেরকে নাগরিক মানতে নারাজ। আন্তর্জাতিকভাবে এটি বড় মানবাধিকার সংকট হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে।

ক্যাম্প স্থাপনের পর উখিয়া-টেকনাফের বনভূমি ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৬ হাজার একরের বেশি। বনজ সম্পদ লুট, ভূমি দখল, অবৈধ শ্রমবাজারে ঢুকে পড়া, এনজিও কার্যক্রমে অনিয়ম- সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে প্রায় স্থবির করে দিয়েছে।

ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন- নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, জমি-সম্পত্তি ফেরত, চলাচলের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সুবিধা এবং বৈষম্যহীন সমান অধিকার- এই শর্তগুলো পূরণ না হলে তারা মিয়ানমারে ফিরতে রাজি নন।

সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চারটি দিককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে-

★ জন্মহার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উদ্যোগ।

Manual2 Ad Code

★ এনজিও কার্যক্রমে কঠোর তদারকি।

★ খাদ্য-চিকিৎসা সহায়তা বৃদ্ধি।

Manual6 Ad Code

★ মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ জোরদার।

১৩ লাখ মানুষের বিশাল চাপ নিয়ে দক্ষিণ সীমান্ত ইতোমধ্যেই বিপজ্জনক এক মানবিক-নিরাপত্তা সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। লাগামহীন জন্মহার সেই সংকটকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। এখনই সুপরিকল্পিত, শক্তিশালী ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে-যার প্রভাব পড়বে দেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code