
শেখ আসাদুজ্জামান আহমেদ টিটু, বিশেষ প্রতিনিধি।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় আকবর আলি খান দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা।
জন্ম ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের এক সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সমর্থন দান করেন। একাত্তরে পাকি বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে হবিগঞ্জের এসডিও থাকাকালীন তিনি পুলিশের অস্ত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করেন।
মুজিবনগর সরকার তখনো প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মচারি লিখিত অনুমতি ছাড়া অস্ত্রের যোগান দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকবর আলি খান নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ, খাদ্য, ও অস্ত্র যোগান দেওয়ার আদেশ প্রদান করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল গঠন করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌঁছে দেন।
তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য যোগান দেওয়ার জন্য গুদামঘর খুলে দেন এবং পরবর্তীতে আগরতলায় চলে যান এবং সেখানে একটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করেন যার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধা এবং উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রিত শরণার্থীদের সহায়তা করা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তানের সামরিক আদালতে তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে চৌদ্দ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সভাপতি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিবন্ধকতার মুখে পদত্যাগ করেন আকবর আলি খান। অবসরে যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে।
এরপর দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। অবসরের পর তাঁর আবির্ভাব ঘটে পূর্ণকালীন লেখক হিসেবে। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, সাহিত্যসহ বিচিত্র বিষয়ে তাঁর গবেষণামূলক বই পাঠকের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। তাঁর সর্বশেষ আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘পুরানো সেই দিনের কথা’।
রক্তাক্ত একাত্তরে এবং মুজিবনগর সরকার গঠনে জনাব আকবর আলি খানের অপরিসীম দেশপ্রেম ও উজ্বল ভুমিকার ইতিহাস বাঙালি জাতি কখনো ভুলবে না। ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে দেশপ্রেমিক আকবর আলি খান মৃত্যুবরণ করেন। শ্রদ্ধাঞ্জলি।
Sharing is caring!