
বাঁশখালীর লবণ চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ!
লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন স্থাপনের দীর্ঘদিনের দাবী
◻️ জসিম উদ্দীন মাহমুদ তালুকদার, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে লবণ উৎপাদনের ধুম চললেও লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লবণ উৎপাদন করেও হতাশায় ভুগছে চাষিরা। বিগত দিনের মতো এবারো লবণে চড়া দাম পাবে সে আশায় বেশি দামে জমি বর্গা নেয় লবণ চাষিরা। কিন্তু বর্তমানে লবণের মূল্য প্রতি মণে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দামে বেচা-বিক্রি হলেও সিন্ডিকেটের কারণে চাষিরা পাচ্ছে ২শ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। আবার লবণ বিক্রির সময় প্রতি মণ লবণে ১০ কেজি থেকে ১৫ কেজি লবণ নিয়ে নেয় ক্রেতারা। ফলে চরম হতাশার মাঝে লবণ মাঠে সময় দিচ্ছে লবণ চাষিরা।
ছনুয়ার লবণ চাষি মোজাম্মেল হক বলেছেন, এ বছর লাভের আশায় চড়া দামে জমি লিজ (লাগিয়ত) নিয়েছি প্রতি কানি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কিন্তু চাষ প্রায় শেষের দিকে এখনো ২০/ ২৫ হাজার টাকা তারা ঘরে তুলতে পারে নাই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছনুয়া, শেখেরখীল ও গন্ডামারায় বেশি লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব এলাকায় অধিকাংশ স্থানে লবণের মজুদ রয়েছে। বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীতে এবার দেড় হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে দেশের কক্সবাজার এবং খুলনার পর চট্টগ্রামের বাঁশখালীতেই প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বাঁশখালীতে পুঁইছড়ি, ছনুয়া, শেখেরখীল,গন্ডামারা, চাম্বলের ডিপুটিঘোনা,শীলকূপের পশ্চিম মনকিচর, সরল, মিনজিরতলা, কাথরিয়া, খানখানাবাদ (আংশিক) এলাকায় লবণের ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে।
লবণ চাষিদের ব্যাপারে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক বলেন, চট্টগ্রামের একমাত্র লবণ উৎপাকারী উপজেলা হচ্ছে বাঁশখালী। বাঁশখালীতে বিভিন্ন ইউনিয়নের উপকুলীয়তে ৩০/৩৫ হাজার এলাকাতে লবণ চাষি রাত-দিন পরিশ্রম করে লবণ উৎপাদন করলেও তারা নানা সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্ব ভোগীরা নানাভাবে ঠকিয়ে লবণ কিনে যাচ্ছে কম দামে। আমি লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য গত (৭ এপ্রিল) উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্মারক লিপি প্রদান করেছি।”
বিসিকের বাঁশখালী উপজেলায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা আনসারুল করিম জানান, বাঁশখালী ও কক্সবাজারে দেশের চাহিদার চেয়ে ২ লাখ মেট্রিকটন লবণ বেশী উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাংলাদেশ ন্যাপের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দীন মাহমুদ তালুকদার বলেন, বাঁশখালীতে লবণ চাষিদের দীর্ঘদিনের একটা প্রত্যাশা ছিল লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ একটা মেশিন স্থাপনের। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে উঠছে না। অথচ প্রায় ৩৫ হাজার চাষি এ কাজের সঙ্গে জড়িত। বাঁশখালীর লবণ চাষিদের যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, আমার দল মওলানা ভাসানী দল। এই দল সবসময় মজলুম ও খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে কথা বলে। বাঁশখালীতে এ বছর প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়েছে। চাষিরা নানাভাবে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ তুলছে এতে দেশের প্রথম এনসিপি লবণ চাষিদের পক্ষে একত্মা প্রকাশের মাধ্যমে চাষীদের নিয়ে মানববন্ধন করেছে। আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। রাজনীতি হচ্ছে জনকল্যাণের জন্য সব রাজনৈতিক দলের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। লবণ চাষি এবং লবণ শিল্পের স্বার্থে তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে সরকার কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।”
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জামশেদুল আলম জানান, লবণ চাষী ও লবণ শিল্প নিয়ে মানুষের অভিযোগটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এবং আমি ব্যক্তিগতভাবেও লবণ চাষীদের নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমার দেশের চাষী ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকবো।
Sharing is caring!