১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নীতিসুদহার অপরিবর্তিত রেখে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৫:৪৭ অপরাহ্ণ
নীতিসুদহার অপরিবর্তিত রেখে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

Manual2 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক,

নীতিসুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশল ব্যর্থ হওয়ার পর সমালোচনার মুখে সেই নীতি থেকে সরে এল বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের নীতিসুদহার অপরিবর্তিত রেখেই চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ভোগাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। একাধিকবার সুদহার বাড়িয়েও তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর মুদ্রানীতি সংশোধন করে নীতিসুদহার (পলিসি রেট) ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতেও আরেক দফা সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের সমালোচনার মুখে তা থেকে সরে এল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকলে গত ২৫ আগস্ট নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশে উন্নীত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর আরেক দফা বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এর আগে ২০২২ সালের মে মাস থেকে নীতিসুদহার মোট ১০ বার বাড়িয়ে ৫ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করা হয়।

উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না, এতে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়বে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে। অর্থনীতিবিদরাও একই পরামর্শ দেন। নীতি সুদহার বাড়াতে থাকলে বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মত দেন তারা। এ পরিস্থিতির মধ্যে গত মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এনে নীতিসুদহার অপরিবর্তিত রাখা হলো।

Manual4 Ad Code

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নামে, যা ডিসেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কয়েক মাসের মধ্যে এই প্রথম মূল্যস্ফীতি এক দুই অঙ্কের নিচে নামল। এর আগে সবশেষ গত বছরের জুনে মূল্যস্ফীতির হার এর নিচে অর্থাৎ ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ ছিল। জুলাই মাসে তা একলাফে তা একলাফে বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠে।

গতবছরের জুলাই মাস ছিল আন্দেলনের মাস, কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে মাসজুড়ে অস্থিরতার কারণে পণ্য সরবরাহ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী হয়, পরে কিছুটা কমলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকে। সর্বশেষ নভেম্বরে তা কমে ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে আরো কমে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশে নেমে আসে।

এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর তিন দিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে বেছে নেওয়া হয় আহসান মনসুরকে। গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই তিনি অর্থনীতি ও সীমিত আয়ের মানুষকে ভোগাতে থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির মধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি।

Manual5 Ad Code

দায়িত্ব নিয়েই মে মাস থেকে চলমান নীতি সুদহার বাড়ানোর কৌশল আরও জোরদার করেন ড. মনসুর। আগস্টেই নীতি সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশে উন্নীত করেন। এরপর কয়েক দফায় আরো বাড়ানোর পর সবশেষ গত ২২ অক্টোবর নীতি সুদহার ৫০ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

Manual3 Ad Code

প্রথম দফায় নীতি সুদহার বাড়ানোর পর মনসুর বলেছিলেন, মুদ্রানীতির পদক্ষেপের ফল পেতে ছয় মাস সময় লাগবে। পাঁচ মাসের ব্যবধানে শীত মৌসুমে মূল্যস্ফীতির পারদ নিচের দিকে নামল। তবে এতে সুদহার বাড়ানোর কোনো কৃতিত্ব নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

তাঁরা বলছেন, শীত মৌসুমে বাজারে নতুন শাক-সবজির সরবরাহের ফলে বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে। এর ফলে তা সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে।

উপরন্তু, নীতি সুদহার বাড়ানোর প্রভাবে ব্যাংক ঋণের সুদহারও বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা সংকটে পড়ে। কারণ, বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে নামে। এর আগে করোনা মহামারীর মধ্যে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।

এমন অবস্থায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ঋণের সুদহার আগের মত ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে। আর মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে আসায় নীতি সুদহার আর না বাড়ানোর ইঙ্গিত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দিয়েছেন আহসান মনসুর।

তাছাড়া সামনে রোজার মাসে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে আমদানি ব্যয় না বাড়ানোর নীতি হিসে সুদহার কমানোর কৌশল নিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর উদ্দেশ্য হল, ব্যাংকের ঋণ সুদহার যাতে আর না বাড়ে।

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code