১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রাসনৃত্যের মধ্যদিয়ে শেষ হল মহারাসলীলা 

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ০৭:০২ অপরাহ্ণ
রাসনৃত্যের মধ্যদিয়ে শেষ হল মহারাসলীলা 

Manual3 Ad Code

জায়েদ আহমেদ,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

বর্ণিল আয়োজন ও নাচগানের মধ্যদিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে শেষ হয়েছে মণিপুরীদের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা। শনিবার ভোরে এ আয়োজনের সমাপ্তি হয়। কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে রাসনৃত্যের বর্ণিল এ উৎসব উপভোগ করতে হাজির হয় দেশ বিদেশের হাজার হাজারো মানুষ।

Manual3 Ad Code

মাধবপুর (শিববাজার) জোড়ামন্ডপ মাঠে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা ১৮২তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে আদমপুর গ্রামে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও মেইতেই মণিপুরিদের ৩৯তম আলাদা উৎসব হয়েছে।

 

গত শুক্রবার দুপুর ১টায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কমলগঞ্জে হাজির হয়েছিল নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার হাজারো মানুষ। তাদের পদচারণায় সকাল থেকে মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরি পাড়াগুলো। শনিবার ঊষালগ্নে এ উৎসব শেষ হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে। উপজেলার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপ মাঠে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স মাঠে মণিপুরী মৈ-তৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে হয়েছে মহারাসোৎসব।

রাস উৎসব ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। বসেছিল শত শত রকমারি আয়োজনে বিশাল মেলা। উৎসবে যোগ দিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগী পর্যটক এসেছেন এখানে। ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিভিন্ন বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যদের সহযোগিতায় সফল হয় অনুষ্ঠান।

মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, ‘মাধবপুর জোড়ামন্ডপ রাসোৎসব এ বিভাগের মধ্যে ব্যতিক্রমী আয়োজন। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। বর্ণময় শিল্পসমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবে সবার মহামিলন ঘটে। মণিপুরিদের রাসলীলার অনেক ধরন। নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, বসন্তরাস, মহারাস, বেনিরাস বা দিবারাস। শারদীয় পূর্ণিমা তিথিতে হয় বলে মহারাসকে মণিপুরীর পূর্ণিমারাসও বলে থাকে।

Manual5 Ad Code

তিনি আরও বলেন, এই উৎসব উপলক্ষে প্রায় ২০দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেছি আমরা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, ও বিজিবি মোতায়েন ছিল উৎসবের নিরাপত্তায়।’

Manual5 Ad Code

উল্লেখ্য, মণিপুরিদের প্রধান উৎসব রাসপূর্ণিমা বা রাস উৎসব শরতের পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত হয়। তার আবেদন ধর্মের সীমানা ভেঙে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে কাছে টেনে নিয়েছে। উপজেলার মাধবপুর শিববাজারে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের (জোড়াম-পে) ১৮২তম বছর এবং আদমপুরের তেতইগাঁওয়ে মণিপুরি মৈতৈ সম্প্রদায়ের ৩৯বছর ধরে মণিপুরীদের রাস উৎসব উদযাপিত করে আসছে। রাস উৎসবের দুটি পর্ব। দিনের বেলায় রাখালরাস আর রাতে মহারাস অনুষ্ঠিত হয়।

Manual2 Ad Code

রাখালরাসের মণ্ডলী বা মঞ্চ মাঠের মাঝখানে ভূমিসমতলে হয়ে থাকে, যাকে ঘিরে বৃত্তাকারে কলাগাছের বেষ্টনী। চারদিকে বসে মেলা। দেশের নানা জায়গা থেকে সওদাগরের দল এই এক দিনের জন্য আগের দিন থেকে এসে পসরা সাজায়। সঙ্গে থাকে মণিপুরীদের পোশাক, হস্তশিল্প, বইপুস্তক। রাখালরাস শেষ হয় গোধূলিবেলায়। কৃষ্ণ তাঁর গোপসখাদের নিয়ে গরুর পায়ের খুরে রাঙা আলোয় ধূলি ওড়াতে ওড়াতে ঘরে ফিরে আসেন। রাখালরাস শেষেই কিন্তু দিনের মেলা সাঙ্গ হয় না। লোকজনের কেনাকাটা, গল্পগুজব, খাওয়াদাওয়া চলতে থাকে। তারপর উন্মুক্ত মঞ্চে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা হয়, আধুনিক গান-নাচ-নাটক, এসবও বাদ যায় না।

পরম আরাধ্য এক সত্তার সঙ্গে মানুষে প্রেমাকুল আত্মার মিলনকে গীত-নৃত্য-বাদ্য-যন্ত্রসহযোগে প্রকাশ করার এক পরিবেশনা শিল্প রাস। শ্রীমদ্ভাগবত, চৈতন্যদর্শন কিংবা বৈষ্ণবীয় সহজিয়া ধারার দর্শনের সীমা ছাড়িয়ে যা মণিপুরি জনপদের নিজস্ব শিল্প প্রকাশরীতির সঙ্গে মিলেমিশে নতুন এক অবয়ব নিয়েছে। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে যাপিত জীবনের বেদনা ও অনুভূতি যেখানে স্পন্দিত হয়ে ওঠে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code