৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী জলকদর খাল কবে নাগাদ উন্মুক্ত হবে জনমনে প্রশ্ন

admin
প্রকাশিত মার্চ ২০, ২০২৫, ০৭:০৭ অপরাহ্ণ
বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী জলকদর খাল কবে নাগাদ উন্মুক্ত হবে জনমনে প্রশ্ন

Manual8 Ad Code

জসিম তালুকদার, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলা পাহাড় ও সাগরের অপূর্ব মিতালির এক অনন্য জনপদ। বাঁশখালীর প্রাচীন জলকদর খাল সাঙ্গু নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে বাঁশখালীর বুক চিরে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। এই খালটিই জলকদর খাল নামে বেশ আলোচিত প্রাচীনতম একটি নাম।

Manual1 Ad Code

নবাব জলকদর খান (সম্ভবত ১৭৩৬-১৭৩৭ খ্রিষ্টাব্দ) এই খালের নামকরণের সাথে যুক্ত থাকতে পারে। কবি আল মাহমুদ তাঁর কবিতায় এই খালের সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন।

Manual8 Ad Code

১৫০ বর্গমাইলের এই উপজেলার ঐতিহ্যের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে জলকদর খাল। খানখানাবাদের উত্তর সীমান্তে ঈশ্বরবাবুর হাট পয়েন্ট ও রাতারকুল গ্রামের জেলেপাড়া ঘেঁষে জলকদর সাঙ্গু নদে মিলিত হয়েছে।

জলকদর খাল শঙ্খ নদ হয়ে খানখানাবাদের অভ্যন্তরে বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, গন্ডামারা, শীলকূপ, ছনুয়া, শেখেরখীল মধ্যবর্তী হয়ে আবারও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলেছে।

একটা সময় বাঁশখালীর অনেক ব্যবসায়ী নৌকা ও সাম্পানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে এই জলকদর খাল হয়ে মালামাল নিয়ে আসতেন শঙ্খ নদপথে। কিন্তু জলকদর খালের অধিকাংশ এলাকা অবৈধ দখলদার ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় আগের সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ। এখন আগের মতো সেই চিত্র তেমন একটা চোখে পড়ে না।

Manual7 Ad Code

দখল আর ভরাটের পরিপ্রেক্ষিতে সরু হয়ে আসছে এই খাল। ফলে নৌকা চলাচলে যথেষ্ট অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা আগের মতো মালামাল পরিবহন করতে পারছেন না।

বলা যায়, জালিয়াখালী বাজার, বাংলাবাজার, সরকারহাট ও শেখেরখীল ফাঁড়িরমুখ বাজার মাছ বেচাকেনায় জমজমাট থাকে। খালের এসব অংশে মোটামুটি পানির প্রবাহ থাকায় মাছের নৌকা, অন্যান্য নৌকা-সাম্পান চলাচল রয়েছে। আবার এসব এলাকায় দখলও বেশি হয়েছে, যা চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া খালের তীরে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। চর ও বাঁধ দখল করে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি। বাস্তুহারা হয়ে অন্য জায়গা থেকে এসে চরে ঘরবাড়ি বেঁধে বসবাস করে আসছেন অনেকেই।

অপর দিকে জলকদর খালের সঙ্গে বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলের আটটি পাহাড়ি ছড়ার প্রবাহিত পানি খালে নামার জন্য অবস্থিত অধিকাংশ স্লুইসগেট নানাভাবে দখল ও বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যার সৃষ্টি হয় খালের পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলোয়।

বলতে গেলে, এ জলকদর খালটি জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও নানাভাবে দখলদারের দখলদারত্বে থাকায় বর্তমানে পানিনিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হয়ে সাধারণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অল্প বৃষ্টি হলেই বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি। ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ।

Manual8 Ad Code

বলতে গেলে, একসময়ের জনগুরুত্বপূর্ণ এই ঐতিহ্যবাহী জলকদর খালটি আগের রূপে নেই। কালের বিবর্তনে হারিয়ে ফেলেছে তার রূপ ও যৌবন। বর্তমানে এ জলকদর খালকে অনেকটা মৃত বললেই চলে। অথচ নদীমাতৃক এ দেশে এমন একটা বিষয় সচেতনমহলকে দারুণভাবে ভাবায়।

তবে খালটি খনন করে পুনরুদ্ধার করা হলে হাজার হাজার একর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। কৃষিপণ্য, লবণ চাষ, মাছ উৎপাদন ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। বাঁশখালী নয়, দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অতীতের মতো বড় অবদান রাখবে এই জলকদর খাল। এ জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

এমন সম্ভাবনাময়ী জলকদর খালকে হেয়-অবহেলায় হারিয়ে যেতে দিলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি একটা সময় পুরো খালটিই বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে ফেলা জলকদর ফিরে পাক তার হারানো যৌবন। চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জলকদর খালের দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জানিয়েছেন খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে এবং শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code