২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা যা যা করেছে, সেগুলো ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’: জাতিসংঘ

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৯:৩৫ অপরাহ্ণ
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা যা যা করেছে, সেগুলো ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’: জাতিসংঘ

Manual6 Ad Code

অনলাইন ডেস্ক, গত জুলাই–আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতাকে দমন করতে শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব যা যা করেছে, সেগুলোকে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলে মনে করছে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানকারী দল। তবে এসব ঘটনাকে এখনই ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনা করছে না জাতিসংঘ। এজন্য আরো তদন্ত দরকার বলে জানিয়েছে বিশ্ব সংস্থাটি।

Manual5 Ad Code

গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন দমনে সরকারের কর্মকাণ্ড পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) এই প্রদিবেদন প্রকাশ করে। ১১৪ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে নৃশংসতা ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন ‘পদ্ধতিগতভাবে’ জড়িত ছিল বলে বিশ্বাস করে জাতিসংঘ।

ওএইচসিএইচআরের তদন্তে উঠে এসেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাঁদের সমন্বয়ে এবং প্রত্যক্ষ নির্দেশে সংঘটিত হয়েছে, যা বিক্ষোভ দমনের কৌশলের অংশ ছিল। তবে সেসব ঘটনাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনার মতো পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেই।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী দল বলছে, এসব ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকে’ আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনার জন্য বিস্তৃত ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজন। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ ও নির্যাতনের (‘স্বতন্ত্র’ আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে) পাশাপাশি দেশীয় আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধের আওতায় পড়ে কিনা, তা নির্ধারণ করতে হবে।

Manual1 Ad Code

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত সহিংস গোষ্ঠীগুলোর সহায়তায় ‘পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে’ জড়িত ছিল শেখ হাসিনার সরকার। শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে (যাদের অনেক শিশু) গুরুতর আহত করার মতো মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নির্বিচারে ব্যাপক গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতনসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে।

এতে আরো বলা হয়, আন্দোলনের সময় যৌন সহিংসতা ও লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনসহ বিশেষভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছের নারী বিক্ষোভকারীরা। কিছু ঘটনায় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের ঘটনার তথ্য নথিভুক্ত হয়েছে।

২০২৪ সালের আগস্টের ৫ আগস্ট সরকার পতন ঘিরে বিক্ষুব্ধ জনতা পাল্টা প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা ঘটায়। আওয়ামী লীগ নেতারা ছাড়াও দলটির প্রকৃত সমর্থকদের বা সমর্থক হিসেবে ধরে নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামীপন্থী হিসেবে ট্যাগ দিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

এতে আরো বলা হয়, বিক্ষোভ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়, আহমদিয়া মুসলিম ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও সহিংস হামলার শিকার হয়। তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং উপাসনালয়ে হামলা হয়।

জুলাই-আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আরও স্বাধীন ও পক্ষপাতহীন তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে জাতিসংঘ। কিছু ঘটনা লোকমুখে শোনা বা পুরোপুরি তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহে ঘাটতি থাকায় সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা উচিত বলে মনে করে তথ্যানুসন্ধান দল।

Manual3 Ad Code

ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগীসহ ২৩০ বাংলাদেশির অনলাইন সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এটি তৈরি। এছাড়া, সরকার, নিরাপত্তা বিভাগ ও রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেও ৩৬টি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে সরেজমিন অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন অনেক প্রাক্তন এবং বর্তমান সিনিয়র কর্মকর্তারাও ছিলেন। বিভিন্ন ভিডিও, ফটো, মেডিকেল ফরেনসিক বিশ্লেষণ, অস্ত্রের অবশিষ্টাংশ বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ সাপেক্ষে তথ্য-উপাত্তগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code