
বোচাগঞ্জ দিনাজপুর প্রতিনিধি
স্থানীয় প্রশাসন, সমাজের বিত্তবান ও মানবিক মানুষের প্রতি আকুল আবেদন—তোজাম্মেলের মতো মানুষদের দিকে একটু মানবিক হাত বাড়িয়ে দিন। হয়তো আপনাদের একটু সহায়তাই হতে পারে তার ভাঙা জীবনকে নতুন করে গড়ার সুযোগ।
ভিক্ষা নয়, একটা দোকান চাই—নিজে খেতে, মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান তোজাম্মেল” একসময় ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সম্মানিত একজন মানুষ। পরিবার, সংসার, কাজ—সবই ছিল গোছানো। দুই কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন সযত্নে, চলছিল নিঃশব্দ এক জীবনসংগ্রাম। কিন্তু জীবন নামক নাটকে তোজাম্মেল হকের (৬০) চরিত্রটা যেন হঠাৎ করেই বদলে গেল।
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার আজিমাবাদ গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দীনের ছেলে তোজাম্মেল হক ছিলেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একজন সিকিউরিটি গার্ড। চুপচাপ, পরিশ্রমী এক মানুষ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে স্ত্রীর সঙ্গে চলতে থাকা ঝগড়া-বিবাদ একসময় সংসার ভেঙে দেয়। জায়গাজমি, সহায়-সম্পত্তি সব বিক্রি হয়ে যায়। অবশেষে স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে একতরফা তালাক দেন।
এখন তিনি মানুষের দয়ার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন। আশ্রয় বলতে সেতাবগঞ্জ অডিটোরিয়ামের একটি কোণা। সেখানেই বিছানা পেতে কেটে যাচ্ছে রাতদিন।
স্থানীয় বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম বলেন, “তোজাম্মেল হক আমাদের এলাকার ভদ্র ও পরিচিত মানুষ। স্ত্রী-সংসারের ঝামেলায় সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। মাঝে মাঝে আমরা খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করি, কিন্তু এটা তো স্থায়ী সমাধান না। প্রশাসন একটু সহানুভূতি দেখালে তিনি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।” দুই দিন আগে হাসপাতালের সামনে একটি অটোরিকশা থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন তোজাম্মেল।
বর্তমানে তিনি বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, তার দেখভালের মতো কেউ নেই। মানবিক বিবেচনায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ভাঙা গলায়, কাঁপা কণ্ঠে তোজাম্মেল বলেন, “আমি কারো কাছে হাত পাততে চাই না। শুধু যদি একটা ছোট দোকান পেতাম, তাহলে নিজে কিছু করে খেতে পারতাম। আমি ভিক্ষুক নই—কাজ করে খেতে চাই। থাকারও তো জায়গা নাই আমার…” এই সমাজে কত মানুষ আছে, যারা একটু সহায়তা পেলে আবার দাঁড়িয়ে যেতে পারে—তোজাম্মেল হক তাদেরই একজন।
আজ তিনি ভেঙে পড়েছেন, কিন্তু নত হননি। তিনি সাহায্য নয়, চান সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার সুযোগ।
Sharing is caring!