২রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও হাসলেন মমতাজ, জানা গেল কারণ

admin
প্রকাশিত মে ১৩, ২০২৫, ১১:২৬ অপরাহ্ণ
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও হাসলেন মমতাজ, জানা গেল কারণ

স্টাফ রিপোর্টার : সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মন খারাপ থাকলে গণভবনে গিয়ে তাকে গান শুনিয়ে আসতেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। মঙ্গলবার (১৩ মে) মিরপুর মডেল থানার হত্যা মামলায় সাতদিনের রিমান্ড শুনানিতে এমনটাই জানান ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।

এদিন বিকেল তিনটার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতের সাততলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালতে তোলা হয় ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজকে। পরে ৩টা ৭ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় পুলিশের বেষ্টনীতে গায়িকার হেলমেট ও মাস্ক খুলে দেয়া হয়।

তারপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজের সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে বক্তব্য রাখেন। তার আবেদনের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।

এ সময় ওমর ফারুক ফারুকী শুনানির শুরুতেই বলেন, আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ। একজন ফুটবলার যদি ভালো খেলেন, তাহলে তার খেলাটাই দেখি আমরা। ওই ব্যক্তিকে পছন্দ করার কারণ ভালো খেলেন তিনি। একইভাবে নায়িকার অভিনয়, সংগীতশিল্পীর ভালো গান পছন্দ করি আমরা। তারা কোন দল করে, সেটি দেখা হয় না।

তিনি বলেন, তাদের কাজকে ভালোবাসি আমরা। কিন্তু এই আসামি জনগণের ভালোবাসা ব্যবহার করে সর্বাত্মকভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সহযোগিতা করেন। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব যখন কিনা আরেক রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি ছিল, গুম-আয়নাঘর, আন্দোলন করলেই যখন কিনা গুলি করা হতো, তখন গানের ভালোবাসা দিয়ে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করতে গেল এই মমতাজ!

পাবলিক প্রসিকিউটর আরও বলেন, জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যেখানে প্রতি মিনিটে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়, সেখানে কিনা সে গান গাইল―‘আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা’। সংসদে তোফায়েল, আমুসহ আওয়ামী লীগে অন্যসব সিনিয়র নেতারা যেখানে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কটু কথা বলেনি। সেখানে এই মমতাজ বক্তব্য রাখল, খালেদার বাপের নাম কী?

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী তার বক্তব্যে এসব বলার সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা ‘শেইম শেইম’ বলে স্লোগান দেন। আর শুনানির একপর্যায়ে আদালতকে পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, এই আন্দোলনের সময় যখন কিনা হাসিনার মন খারাপ থাকতো, তখন গণভবনে গিয়ে হাসিনাকে গান শোনাত সে।

এ সময় হাস্যরসের তৈরি হয় এজলাসে। আর কাঠগড়ায় উপস্থিত মমতাজ পুরো সময় বিষণ্ন থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উল্লেখিত বক্তব্য শুনে গায়িকা নিজেও হাসতে থাকেন। তারপর বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটে তার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত।

এর আগে সোমবার (১২ মে) দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মমতাজকে।

গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. সাগর নামের এক ব্যক্তি মারা যান। এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর নিহতের মা বিউটি আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ২৫০-৪০০ জনকে। এ মামলায় ৪৯ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি মমতাজ।

প্রসঙ্গত, ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন তিনি। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদের কাছে পরাজিত হন মমতাজ বেগম।

Sharing is caring!