
আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস!
স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকেঃ-
মহান স্বাধীনতা দিবসে সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা এবং জাতির জন্য আত্মোৎসর্গ করা সকল শহীদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঘুমন্ত বাঙালি জাতির ওপর ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা শুরু করে। সেই ভয়াল রাতে ধানমণ্ডির-৩২ নম্বর বাড়িতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের নেতাদের উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করেন। বিভিন্ন নথিপত্র অনুসারে, ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা:
বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ঘোষণা পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন এবং বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী স্বাধীনবাংলা সরকারও এ ঘোষণাটি বিভিন্ন দেশে প্রচার করে। ইংরেজিতে লেখা সেই ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন:
“This may be my last message, from today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.”
বাংলায় অনুবাদ:
“এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্যবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।” (সূত্র: অসমাপ্ত আত্মজীবনী)
বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা ওয়্যারলেস, টেলিফোন এবং টেলিগ্রামের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরে বঙ্গবন্ধু আরেকটি লিখিত বার্তা পাঠান, যেখানে তিনি দেশবাসীকে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু প্রেরিত দ্বিতীয় বার্তায় বলা হয়, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ, দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোনো আপস নাই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক প্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুণ। জয় বাংলা’।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঐদিন রাত ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নং বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায় এবং এর তিন দিন পর তাঁকে বন্দী অবস্থায় পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।
২৬ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া এক ভাষণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করে। ২৬ শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।
আজকের দিনটি জাতির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম এবং বিজয়ের ইতিহাসকে স্মরণ করার দিন। আসুন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার শপথ নেই।
জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু!
Sharing is caring!