২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট জাফলংয়ে শতকোটি টাকার পাথর লুট : বিএনপি নেতাসহ দুই মামলা আসামি ১১৪

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ১০:৪৯ অপরাহ্ণ
সিলেট জাফলংয়ে শতকোটি টাকার পাথর লুট : বিএনপি নেতাসহ দুই মামলা আসামি ১১৪

জাফলংয়ে শতকোটি টাকার পাথর লুট : বিএনপি নেতাসহ দুই মামলা আসামি ১১৪

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :: প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা সিলেটের জাফলংয়ে বালু-পাথর লুটের মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। শনিবার বিকালে বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, “শুক্রবার গোয়াইনঘাট থানায় অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বাদী হয়ে একটি ও বৃহস্পতিবার সিলেটের পরিবেশ আদালতে অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ ২২ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। দুই মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ১১৪ জনকে।”

দুই মামলাই আসামি করা হয়েছে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় পদ স্থগিত হওয়া সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ এবং সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপনকে।

ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, “গণমাধমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের আলোকে লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে মামলা করা হয়েছে।”

মামলার বিষয়ে জানতে রফিকুল ইসলাম শাহপরাণের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। শাহ আলম স্বপনও ফোন ধরেননি।

৫ অগাস্ট থেকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের পাথর কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু ‘লুটপাটের’ শুরু।

স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে পাথর মজুতের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে পরিমাপ করে প্রতি মাসেই হিসাব সংরক্ষণ করত প্রশাসন।

সর্বশেষ গত ২৬ জুলাই জাফলংয়ে প্রায় ৩ কোটি ৭৪ লাখ ঘনফুট পাথর মজুত ছিল। ৫ অগাস্ট রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে সেখানকার সিসি ক্যামেরা বিকল করে দুষ্কৃতকারীরা। পরে টানা দুই সপ্তাহ জাফলং জিরো পয়েন্ট-সংলগ্ন পিয়াইন ও গোয়াইন নদের আশপাশে জমে থাকা অন্তত এক কোটি ঘনফুট পাথর লুট করা হয়। এর আনুমানিক মূল্য ১০০ কোটি টাকা। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ১৮ অগাস্ট গোয়াইনঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন। গত ১৪ অক্টোবর জাফলংয়ে অবৈধভাবে বালু ও পাথর তোলা বন্ধে টাস্কফোর্সের অভিযান চলে।

ওইদিন জাফলংয়ে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালানো হয় বলে জানান, গোয়াইনঘাটের ইউএনও মো. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “অভিযানে অবৈধভাবে পাথর তোলায় ব্যবহৃত ৭০০টি নৌকা, সাড়ে ৮ লাখ ঘনফুট বালু, ১৫ হাজার ঘনফুট পাথর, দুটি পাথর ভাঙার মেশিনসহ আটটি ইঞ্জিন নৌকা, দুটি শ্যালো বোমা মেশিন, তিনটি ট্রাক, তিনটি ডাম ট্রাক, দুটি পে- লোডার জব্দ করা হয়। উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান চালায়।”

এ সময় গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইদুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা, সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) ভারপ্রাপ্ত কোয়ার্টার মাস্টার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, গোয়াইনঘাট থানার এসআই ফখরুল ইসলাম ছিলেন।

অভিযান শেষে গোয়াইনঘাটের ইউএনও মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি-বেলার দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশ প্রতিপালনের অংশ হিসেবে উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি ও পুলিশ সমন্বয় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালায়।”

অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এবং আলামতের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর বাংলাদেশের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা-ইসিএভুক্ত এলাকায় বিধি অনুযায়ী মামলার কথা জানিয়েছিলেন ইউএনও।

পরিবেশ রক্ষায় নিয়মিত অভিযান চলবে জানিয়ে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলোর একটি। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাফলংকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা-ইসিএ ঘোষণা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এখানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে পর্যটন কেন্দ্রটির সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশও হুমকির মুখে।”

এ ঘোষণার পর জাফলং থেকে সব ধরনের বালু ও পাথর তোলা নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বে একটি গোষ্ঠী বালু-পাথর তোলার মাধ্যমে জাফলংয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

Sharing is caring!