ডেস্ক রিপোর্ট, রংপুর
রংপুর মহানগরীর পাটবাড়ি এলাকার ভাঙাচোরা সড়কটি যেন অবহেলার এক নীরব সাক্ষী। খানাখন্দে ভরা, বর্ষার দিনে হাঁটতে গেলেই জুতায় কাদা, গাড়ির চাকায় ছিটে পানি। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার পথে সেই কষ্ট পোহাত পাঁচ বন্ধু—কিন্তু অভিযোগ না তুলে তারা বেছে নিয়েছে কাজের পথ।
অষ্টম শ্রেণির মো. জুয়েল রানা ও মো. মারুফ, নবম শ্রেণির মো. আব্দুল করিম ও মো. ইমরান খান এবং দশম শ্রেণির মো. সাহেদ—এই পাঁচ শিক্ষার্থী কয়েক মাস ধরে নিজেদের টিফিনের টাকা জমিয়েছিল। খাওয়া বাদ দিয়ে যে টাকা বাঁচিয়েছে, সেই টাকায় কিনেছে খোয়া, বালু ও সিমেন্ট। তারপর নিজেরাই হাত লাগিয়েছে রাস্তার সংস্কারে।
সোমবার দুপুরে দেখা যায়, স্কুলের পোশাক গায়ে তাদের কেউ কোদাল চালাচ্ছে, কেউ পানি দিচ্ছে মিশ্রণে। তাদের ছোট ছোট হাতের শ্রমে যেন মিশে আছে এক বড় মনের প্রতিচ্ছবি।
জুয়েল জানাল, 'রাস্তাটা অনেক দিন ধরে ভাঙা ছিল। বৃষ্টির সময় স্কুলে যাওয়া যেত না। তাই ঠিক করলাম, কেউ না করলে আমরা করবো। নিজেরা টিফিনের টাকা জমিয়ে যখন খোয়া-বালু কিনলাম, তখন মনে হলো আমরা একটা ভালো কাজের শুরু করেছি।'
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারী শেখ মওদুদ আহমেদ বলেন, 'যে সময়ে তরুণ প্রজন্ম নানা নেতিবাচক আসক্তিতে ডুবে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে স্কুলের ছেলেগুলো হাতে কোদাল তুলে রাস্তা মেরামত করছে—এটা সমাজের জন্য এক অনুকরণীয় বার্তা।'
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজ ব্যাপারী বলেন, 'সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষা না করে যদি সবাই এমনভাবে নিজের এলাকার দায়িত্ব নেয়, তাহলে আমাদের শহরটা অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।' এই উদ্যোগের মধ্যে শুধু রাস্তা মেরামতের গল্প নেই; আছে সামাজিক দায়িত্ববোধ, এক প্রজন্মের সচেতনতার প্রতিচ্ছবি।
খানাখন্দ ভরা রাস্তা যেন প্রতীকে পরিণত হয়েছে—অবহেলার গর্তের ভেতর থেকেও জন্ম নিতে পারে আশার ফুল। দিন শেষে কাজ শেষ করে যখন পাঁচ বন্ধু একসাথে রাস্তার ধারে বসে পানি খাচ্ছিল, সূর্যের আলোয় তাদের মুখে ফুটে উঠছিল গর্বের হাসি—একটি রাস্তা ঠিক করার নয়, বরং নিজেদের বিশ্বাসকে নতুনভাবে গড়ে তোলার আনন্দে।