মোঃ রায়হান হোসেন ::
বুঙ্গার চিনিতে টালমাটাল সিলেট। প্রতিবেশী দেশ ভারতে চিনির দাম প্রায় অর্ধেক হওয়ায় সীমান্ত দিয়ে চিনি চোরাচালান গত দুই মাস ধরে বেড়েছে।
চোরাচালানের চিনি সিলেটে বেশি ঢোকায় এর দামও দেশের অন্য স্থানের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। কিন্তু ০৫ আগস্টের পর থেকে চিনি চোরাচালান নিয়ে গণমাধ্যমগুলো সরব হলেও প্রসাশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এসবে জড়িত থাকার ফলে সীমান্ত দিয়ে চিনি চোরাচালান দিন দিন বেড়েই চলছে। এর ফলে সিলেটের বাজারেও চিনির দাম এক লাফে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে গেছে। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারসহ সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে চিনিসহ ভারতীয় পণ্য চোরাচালান হচ্ছে। এসব দেখেও না দেখার ভান করেন সীমানা পাহারায় নিয়জিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অনেক সদস্য।
সূত্র বলছে, সিলেটের পাইকারি বাজার কালীঘাটেই দৈনিক প্রায় কোটি টাকার চোরাই চিনি কেনাবেচা হয়। এরপর দেশীয় নানা ব্র্যান্ডের স্টিকারযুক্ত বস্তায় ভরে এসব চিনি পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। চোরাচালানে আসা এসব চিনি স্থানীয়ভাবে ‘ভারতীয় বুঙ্গার চিনি’ নামে পরিচিত। জেলার জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তের শতাধিক স্থান দিয়ে চোরাই পণ্য সিলেটে প্রবেশ করে। সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিরা এই কাজে জড়িত।
পাইকারি বাজার কালীঘাটে চিনি নিয়ে ঢোকার পথে প্রায়ই শাহপরান (রহ.) থানা পুলিশের নিকট চোরাই চিনি আটকের খবর পাওয়া গেলেও পাচারের পরিমাণের তুলনায় তা খুবই কম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অভিযোগ রয়েছে শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মনির হোসেন তার গাড়ি চালক শফিকের মারফতে চিনি চোরাকারবারিদের সঙ্গে রফাদফার ফলসরূপ চোরাই চিনি আটক করলেও মামলায় আসামি করেন শুধু ট্রাকের চালক ও হেলপারদের। মূলত রফাদফার কারণেই মামলা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন চিনি চোরাচালানে জড়িত রাগব বোয়ালরা। এ কারণেই রাঘব-বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, চুনোপুঁটি নিয়ে টানাটানি করছে থানা পুলিশ বলে সচেতনমহলের দাবি।
শাহপরান (রহ.) থানা পুলিশের অভিযানে দৈনিক চিনিসহ চালক হেলপার আটকের খবর পাওয়া গেলেও অদৃশ্য কারণে একটি মামলাতেও চিনির প্রকৃত মালিক কে তা শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। চোরাচালানের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে পুলিশের গাছাড়া ভাব সচেতন মহলে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত (০৫ নভেম্বর) মঙ্গলবার শাহপরান থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে তিন ট্রাক ভারতীয় ‘বুঙ্গার’ চিনি জব্দ করা হয়েছে এবং এসব গাড়িতে বহন করার দায়ে ৩ জন ট্রাক চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার দুই ট্রাক চালক তাদের জবানবন্দিতে কয়েকজনের নাম প্রকাশ করলেও তাদের কাউকে পাকড়াও করতে রাজি নন শাহপরান (রহ.) থানা পুলিশ।
সুত্রমতে, সুরমাগেইট থেকে আটকৃত দুটি ট্রাক ভর্তি চোরাই চিনির মালিক জৈন্তাপুরের হরিপুর এলাকার লোকমান উরফে ছোট লোকমান, ৫নং ফতেপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও উপর শ্যামপুর এলাকার আরব আলীর পুত্র রুবেল শরীফ উরফে তেলচুরা রুবেল এবং হরিপুর এলাকার পাগলা হাসমতের পুত্র কামরুল। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মনির হোসেনের গাড়ি চালক শফিকের মারফতে রফাদফাতেই এই মুলহোতাদের আসামি করতে অনিচ্ছুক থানা পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, শাহপরান থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে তিন ট্রাক ভারতীয় ‘বুঙ্গার’ চিনি জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে শাহপরাণ থানাপুলিশ সুরমাগেইট বাইপাস থেকে দুই ট্রাকে ৪৩০ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ ৩ জনকে আটক করে। জব্দকৃত চিনির বাজার মূল্য প্রায় ২৫ লাখ ২৮ হাজার ৪০০ টাকা। অপরদিকে একই দিন দুপুরে সিলেট-তামাবিল সড়কের অভিযান করে ৫ হাজার ১৪৫ কেজির ৬ লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় অপর আরেকটি চিনির চালান জব্দ করেছে শাহপরান থানা পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন- সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার নুরপুর দরগাবাজারের আখলাছ আলীর ছেলে মো. হোসেন আহমদ (২৫), কানাইঘাট উপজেলার দীঘিরপাড় গ্রামের হাফিজ আবদুল কুদ্দুছের ছেলৈ কাওছার আহমদ (৩৫) ও একই উপজেলার দুলাই নয়ামাটি গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে মো. নিজাম উদ্দিন (৪৫)।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, রাস্তায় তল্লাশীকালে সুরমাগেইট বাইপাস থেকে দুই ট্রাকে ৪৩০ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ ৩ জনকে আটক করা হয় এবং অপরদিকে সিলেট শহরের দিকে আসা একটি ট্রাক পুলিশের চেকপোষ্ট দেখে ট্রাক থামিয়ে ড্রাইভারসহ দুজন পালিয়ে যায়। পরে ট্রাকে থাকা ত্রিপল সরিয়ে ১০৫ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার করা হয়। এ দুটি ঘটনায় শাহপরান থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।