মোঃ আফফান হোসাইন আজমীর,রংপুর প্রতিনিধিঃ- রংপুর মহানগরীর বাবুপাড়া কয়েকদিন থেকে প্রভাবশালী দুই গ্রুপের জমিজমা দখল নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। যে কোন মুহুর্তে বড়ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।এরই মধ্যে পাল্টা পাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুই পক্ষ।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর প্রসক্লাব হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন মোঃ আসলামের পক্ষে এডভোকেট মোঃ ইসহাক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আসলাম ও তার ছেলে আরমান, শামীম। এর আগে গত শনিবার আসলাম গং এর বিপক্ষে রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুর এর হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী মৃত নুর মোহাম্মদ এর ছেলে জুয়েল হোসেন।
জুয়েল হোসেনের দাবি ব্যক্তি মালিকানার ক্রয়কৃত সম্পত্তি তাদের। অপর পক্ষ আসলামের আইনজীবী এসাহাকের দাবি এটি জেলা প্রশাসক কর্তৃক নিলামে কেনা সম্পত্তি তার মক্কেলের। এই মালিকানা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। স্থানীয়দের দাবি সমস্যা নিরসন না হলে বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটতে পারে এলাকায়।সেনাবাহিনীর তৎপরতায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সেখানকার জনমনে রয়েছে এখনো শঙ্কা।
পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের পর সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উৎখাত হয়ে যাওয়া আওয়ামী সরকার আমলের ২০১৪ সালে বিতর্কিত নিলাম দেখিয়ে বাবুপাড়ায় অবস্থিত সোনালী ফ্লাওয়ার মিলস এর স্বত্বাধিকারী হাজী আসলাম গং একই ওয়ার্ড পীরপুর এলাকার বাসিন্দা মৃত নুর মোহাম্মদ উরফে লালু মিয়ার ক্রয়কৃত জলাশয় ভরাট করে জবরদখলে নেয়।
সেই জমি পুনঃ উদ্ধার করতে ১৮ অক্টোবর শুক্রবার সকালে প্রয়াত লালু মিয়ার ছেলে জুয়েল হোসেনসহ তার পরিবারের লোকজনেরা স্কেভটর ভাড়া করে নিয়ে ভরাট পুকুর খনন করতে গেলে উভয়ের মধ্যে ঘটে বাক-বিতণ্ডা। এরই এক পর্যায়ে সেনাসদস্যবৃন্দ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে স্কেভটরটি জব্দ করে নিয়ে যায়। এঘটনায় জুয়েল হোসেন প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকার জমিদার পরিবার হাজী তছির উদ্দিনের নিকট থেকে আমার বাবা নুর মোহাম্মদ উরফে লালু মিয়া বিগত ১৯৯০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দলিল মূলে ৩০ শতাংশ ও বায়না সূত্রে আরো ২৩ শতকসহ মোট ৫৩ শতক জলাশয়সহ জমি ক্রয় করে নিজ নামে রেকর্ড ও নামজারি করে মাছ চাষ করে আসেন, যার দাগ নং-৪৩১৩, খতিয়ান নং- ২১৭৪, হালদাগ নং-২০৬৬।
বিগত ২০০১ সালে লালু মিয়া মৃত্যুবরন করলে তার ছেলে জুয়েল হোসেন নিজেই মাছের চাষ করেন ওই জলাশয়ে। যা লালু মিয়ার "দিঘি" নামে বেশ পরিচিত হয়। তিনি আরো বলেন,আমাদের প্রতিপক্ষ হাজী আসলামগং হঠাৎ ২০১৪ সালে রংপুর জেলা প্রশাসক কর্তৃক দাবিকৃত নিলামের বিতর্কিত কাগজপত্র দিয়েই মাছভর্তি ভরাপুকুরে মাটি ভরাট করে জবরদখল করেন।
প্রয়াত লালু মিয়ার ওয়ারিশ গোলাম মোস্তফা, সবুর খানসহ শাহারিয়া খানম শিউলি বেগম প্রতিপক্ষের মালিকানা কাগজপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দেখিয়ে ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়ে প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ আসলামগংদের নিলাম কৃত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য গত ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুসন্ধান ফরম পুরন করে তথ্য চাইলে কর্তৃপক্ষ লিখিত আকারে বর্ণনা দিয়ে জানান ওই ধরনের কোনো নিলাম হয়নি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে।
এই ঘটনার বিষয়ে একাধিক স্থানীয় জানান, উৎখাত হওয়া সরকারী দল আওয়ামীলীগ নেতাদের আঁতাতে প্রশাসনের কথিত লোকজনকে অর্ধকোটি টাকা দিয়ে বিগত ১৪ সালে জুয়েলগংদের ভোগ দখলে থাকা সম্পত্তি জবরদখল করে নেয় তারা।
তবে অপর পক্ষ সোনালী ফ্লাওয়ার মিলস এর স্বত্বাধিকারী হাজী আসলাম উদ্দিন এর ছেলে ইরফান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের উপস্থিতিতে তিনি দাবী করে বলেন, ১৯৯০ সালে আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পৃথক তিন দাগে ৭০ শতক জমি নিলামে ক্রয় করি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে লোকজন এসে লাল পতাকা লাগায়া বুঝায় দিয়ে গেছে। আমার যতটুকু জানা- এখানে তসীর উদ্দিনের পুকুর ছিল সেটা দেখার লোকজন রাখছিল।
তারাই একটা বায়না দলিল মারফতে মামলা রুজু করে,
আমরা সেটার রায় পেয়ে যাই। রায় পাওয়ার পর আমরা ভোগদখল করে আসছি। ২০১৩ সালে আবার পুকুর ভরাট করে মাপযোগ করলাম তখন তারা আবার একটা মামলা রুজু করে। আমরা ২০১৬ সালে সেই মামলার রায় পাই। পরে আমরা চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য মামলা করি ২০১৯ সালে। সেটারও রায় পাই তার কপি আছে আমাদের কাছে।
এদিকে ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা কাল্লু মিয়া,জাবেদ আলী,রানী বেগমসহ আরও অনেকেই প্রতিবাদ করে বলেন, হাজী আসলামগংরা এই এলাকার নাম করা ভূমিদস্যু, তারা যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই সরকারের লোকজনদের ম্যানেজ করে অপরের জমি জবরদখল করেন। এই আসলামগং আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে দেয়াসহ উচ্ছেদ করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। আমরা তাদের ক্ষমতার কাছে অসহায়। যেখানেই বিচারের জন্য যাই সেখানেই আসলামগং মোটা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে। এজন্য আমরা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন,আমরা জমিজমা সংক্রান্ত কোন্দলের খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যাই এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করি। তবে এসংক্রান্ত বিষয়ে কোনো পক্ষেই লিখিতভাবে অভিযোগ দেইনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।