জায়েদ আহমেদ, মৌলভীবাজার:
ছয় সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে টানা তিন দিন ধরে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি করেছেন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) চা–শ্রমিকেরা।
গত সোমবার থেকে সারাদেশের এনটিসির ফাড়ি বাগানসহ ১৬টি চা–বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি করেছেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের প্রাপ্য মজুরী না পেলে কাজে যোগদান করবেন না।
এদিকে বুধবার কর্মবিরতির ৩য় দিনে এনটিসির চা বাগানগুলোতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি করছেন শ্রমিকরা। চা বাগানগুলোর কারখানার সামনে জড় হয়ে নানান শ্লোগান দিচ্ছেন তারা।
মাধবপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক মালতি বলেন, আমরা তিন দিন ধরে আন্দোলন করছি। আমাদের ঘরে খাবার নেই। কারো হাতে টাকা নেই। এভাবে আর কয় দিন চলবো। বাড়িতে ছেলেমেয়েরা না খেয়ে আছে। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাই আমাদের মজুরী যেন দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালীর সভাপতি ধনা বাউরী বলেন, আমাদের শ্রমিকরা আজ তিন দিন ধরে টানা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন। কিন্তু মালিকপক্ষ মজুরী পরিশোধ করছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী জানান, দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করা শ্রমিক এক সপ্তাহের মজুরি না পেলে অবর্ণনীয় সমস্যায় পড়তে হয়। এরপরও মোট ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মজুরি পায়নি। কবে দেয়া হবে তার কোন নিশ্চয়তা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিতে পারছেন না। বিভাগীয় শ্রম দপ্তর এর উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসক এর বিভিন্ন উদ্যোগ ও আশ্বাস মালিকপক্ষের ব্যর্থতায় ইতিপূর্বে সফল হয়নি। এমতাবস্থায় হতাশ শ্রমিকরা গত সোমবার থেকে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের সমর্থন দিয়েছেন। শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি বা নতুন কোন দাবি নিয়ে কোন ধর্মঘট করছেন না। পাওনা পরিশোধ করলে পেট ভরে ভাত খেয়ে আগামীকাল কাজে যেতে শ্রমিকরা প্রস্তুত। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় মালিকদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান করছি। সেই সঙ্গে মহাপরিচালক, শ্রম অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের আবেদন করছি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে সারা দেশে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফাড়ি বাগানসহ ১৬ চা বাগান রয়েছে, এসব বাগানে প্রায় ১৭ হাজার চা–শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের ওপর আরও ৩০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে।