লোকমান ফারুক, রংপুর
শীতের কুয়াশা তখনো পুরোপুরি কাটেনি। রংপুরের গ্রাম থেকে শহর—মাঠ, বাজার, অলিগলি—সবখানে মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ত। কিন্তু এই নীরবতার আড়ালেই বদলে গেছে এক গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা। কাগজে-কলমে, পরিসংখ্যানে, ভোটার তালিকার পাতায়—রংপুরে বেড়েছে মানুষ। ভোটার।
সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় রংপুরের ছয়টি আসনে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৭ জন। এই বৃদ্ধির সিংহভাগই তরুণ—যারা এবার প্রথমবারের মতো ব্যালটের সামনে দাঁড়াবে। সংখ্যার হিসেবে ছোট হলেও প্রতীকী দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ—তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও বেড়েছে ৭ জন।
রংপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, গত নির্বাচনে এই ছয় আসনে মোট ভোটার ছিল ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ছিলেন ১২ লাখ ২০ হাজার ৩৯৪, পুরুষ ১২ লাখ ১২ হাজার ৮৭, আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২৪ জন। ভোটকেন্দ্র ছিল ৮৫৮টি।
এক বছর ঘুরতেই চিত্র পাল্টে গেছে। এবার মোট ভোটার ২৫ লাখ ৯৯ হাজারের বেশি। নারী ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৬ হাজার ৩৩৩ জনে, পুরুষ ১২ লাখ ৯২ হাজার ৮৩৮ জন, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৩১ জন। কেন্দ্রও বেড়েছে—এখন ৮৭৩টি। সংখ্যা বাড়লেও ভারসাম্য বদলায়নি। আগের মতো এবারও পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার বেশি। যেন নীরবে কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ভোটের ময়দানে নারীর উপস্থিতি আরও দৃশ্যমান হচ্ছে।
আসনভিত্তিক বদলের গল্প
রংপুর-১ আসনে এসেছে ভৌগোলিক পরিবর্তন। গঙ্গাচড়া ও সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে ৯ নম্বর ওয়ার্ড। এতে ভোটার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ২২৭—বৃদ্ধি ৪৩ হাজার ৮। কেন্দ্রও বেড়ে ১৩৯টি।
রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে ভোটার বেড়েছে ২৩ হাজার ৮৭৫ জন। মোট ভোটার এখন ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯২১। কেন্দ্র ১৩৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৭টি।
রংপুর-৩—সবচেয়ে বড় আসনগুলোর একটি। সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন, সিটি কর্পোরেশনের ১০ থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড নিয়ে গঠিত এই আসনে ভোটার বেড়েছে ১০ হাজার ৪৫৬ জন। তবে এখানে এক ব্যতিক্রম—ভোটকেন্দ্র কমে হয়েছে ১৬৯টি।
রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৩১ হাজার ৫২৩ জন। কেন্দ্র সংখ্যা অপরিবর্তিত—১৬৩টি।
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন ২৮ হাজার ৮৫৪ জন। কেন্দ্র বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২টি।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে ভোটার বেড়েছে ২৫ হাজার ৯৮১ জন। কেন্দ্র এখন ১১৩টি।
তালিকার পেছনের মানুষ
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, এই বৃদ্ধির পেছনে আছে দুটি কারণ—বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ। একই সঙ্গে বাদ দেওয়া হয়েছে মৃত ভোটারদের নাম। অর্থাৎ তালিকা শুধু বড় হয়নি, হয়েছে তুলনামূলকভাবে আরও পরিশুদ্ধ।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজিজার রহমান বসুনীয়া বলেন,'নতুন ভোটারদের বেশিরভাগই তরুণ। এবারই প্রথম তারা ভোট দেবে। পাশাপাশি কিছু মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।'
সামনে নির্বাচন, সামনে প্রশ্ন
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটার বেড়েছে, কেন্দ্র বেড়েছে, আগ্রহও বাড়ছে—এমনটাই বলছে পরিসংখ্যান।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই নতুন ভোটাররা কি শুধু সংখ্যায় যুক্ত হবে, নাকি তারা বদলে দেবে ভোটের ভাষা? তরুণদের এই ঢেউ কি কেবল তালিকায় সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি ব্যালট বাক্সে গিয়ে তার প্রতিফলন ঘটবে?
রংপুরের মাঠ-ঘাটে সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো লেখা হয়নি। লেখা হবে—ভোটের দিনে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক -শেখ তিতুমীর আকাশ।
বার্তা প্রধান : মোঃ সেলিম উদ্দিন
ইমেইল: dailyswadhinbhasha@gmail.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.swadhinbhasha.com কর্তৃক সংরক্ষিত।