মোস্তফা লোকমান ফারুক, রংপুর
শীতের রোদে রংপুরের নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে জমতে শুরু করেছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ভিড়। কিন্তু উত্তেজনা নয়, বরং একধরনের হিসেবি নীরবতা। যেন সবাই জানে, আজকের উপস্থিতি শুধু একটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের ঘটনা নয়; এটি একটি রাজনৈতিক অবস্থানের মুহূর্ত ঘোষণা। ঠিক সেই মুহূর্তেই নির্বাচন কর্মকর্তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
তাঁর হাতে রংপুর-৩ (সদর) আসনের মনোনয়ন ফরম—যেটি নেওয়া হয়েছে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের পক্ষে। নির্বাচন কর্মকর্তা শোয়েব সিদ্দিকীর কাছ থেকে ফরম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি যেন প্রকাশ্যে জানিয়ে দিল—তারা নির্বাচনের মাঠে আছে, তবে শর্তসাপেক্ষে। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মোস্তফা যে কথাগুলো বললেন, তাতে ছিল প্রত্যয়ের সঙ্গে সতর্কতার মিশেল।
তিনি বলেন, "আজ রংপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি আমাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রথম আত্মপ্রকাশ।" তবে এই অংশগ্রহণ নিঃশর্ত নয়—সে কথাও স্পষ্ট করেন তিনি। মোস্তফার ভাষায়, নির্বাচন মানে শুধু ভোটের দিন নয়; নির্বাচন মানে সমান মাঠ।
"যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে, যদি সব দল স্বাচ্ছন্দ্যে অংশ নিতে পারে, যদি নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি সব প্রার্থীর জন্য সমানভাবে বাস্তবায়ন হয়—তবেই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে," বললেন তিনি।
কণ্ঠে ছিল শর্তের দৃঢ়তা, বাক্যে ছিল প্রত্যাশার ইঙ্গিত।
তাঁর মতে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত হলে জাতীয় পার্টি বরাবরের মতো ভালো ফল করবে—এ বিশ্বাস থেকেই কথা। রংপুর-৩ আসনকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে যে গুঞ্জন—জাতীয় পার্টির দুর্গে নাকি বহিরাগতদের হানা—সে প্রসঙ্গও এড়িয়ে যাননি মোস্তফা। তবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন সময়ের দিকে। "জাতীয় পার্টির জনসমর্থন কমেছে না বেড়েছে, সেটার প্রমাণ নির্বাচনই দেবে, বলেন তিনি।
তাঁর ভাষায়, নির্বাচনই হচ্ছে জনমতের আয়না—সেই আয়নায় নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখতেই তারা আগ্রহী। ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মোস্তফা আরও স্পষ্ট করেন দলের অবস্থান।
তিনি জানান, জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও এখনো সব আসনে 'ভাইটাল' প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি, তবে সময় আছে।
তাঁর মতে, প্রার্থী হওয়া মানেই যোগ্য হওয়া নয়—জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও নির্বাচন পরিচালনার সক্ষমতা—সবকিছু যাচাই করেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। দুপুরের সেই দৃশ্য ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হন, স্লোগান স্তিমিত হয়, নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে ফিরে আসে স্বাভাবিক ব্যস্ততা। কিন্তু মনোনয়ন ফরমের সেই কাগজটি রয়ে যায়—একটি প্রতীক হিসেবে।
প্রতিযোগিতার, শর্তের, প্রত্যাশার। রংপুরের শীতল বাতাসে তখন একটি প্রশ্ন ঢেউ খেলে—এই নির্বাচন কি সত্যিই হবে সমান মাঠে? সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে সময়ের ব্যালট বাক্সে। আর সেই উত্তরের অপেক্ষাতেই জাতীয় পার্টির এই প্রথম