বিশেষ প্রতিনিধি
গত বুধবার বাংলামোটরের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যখন মাইক্রোফোনে নাম পড়ছিল—‘শাপলা কলি’একটি নতুন রাজনৈতিক সুর বাজতে শুরু করল। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার সময় রংপুরের দুই নাম যেন ধীরে ধীরে সামনে থেকে আলোকিত হলো: রংপুর-১ থেকে আল-মামুন এবং রংপুর-৪ থেকে আখতার হোসেন।
এই দুই তরুণকে দেখে বোঝা যায়—এরা কেবল স্থানীয় ক্ষমতা দখলের ইচ্ছুক নয়; এগিয়ে আছে গতকালের আন্দোলন, কণ্ঠে রক্তাক্ত স্মৃতি, এবং রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রশ্নে এক দৃঢ় প্রত্যয়। আল-মামুনকে যে ‘জুলাই যোদ্ধা’ বলা হচ্ছে—তার ইতিহাসের এক বিশেষ মুহূর্তে ছাত্রাঙ্গনে মাইক হাতে তীক্ষ্ণ প্রতিবাদ করা—তারই ধারাবাহিকতায় এনসিপি তাকে রংপুর-১ এর দায়িত্ব দিল বলে স্থানীয়রা বিশ্লেষণ করছেন।
গঙ্গাচড়া উপজেলা ও রংপুর সিটির নির্দিষ্ট ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর-১ এলাকা অতীতের রাজনৈতিক দুর্গশালী—১৯৮৬ থেকে জাতীয় পার্টির একধরনের আধিপত্য ছিল। তবে ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদে সেই মনোরম কাহিনি নড়েচলা করা শুরু করে, যখন আসনটি আওয়ামী লীগের কাছে হাতবদল হয়। এখন সেখানে আল-মামুনকে নির্বাচনে আনা হচ্ছে—এক রকম প্রতিশ্রুতি যে ওই পুরনো ভিত্তি কে না ভাঙলেও, নতুন কণ্ঠস্বর আসবে।
কাউনিয়া ও পীরগাছার সমন্বয়ে গঠিত রংপুর-৪ থেকে লড়ছেন আখতার হোসেন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির পাতায় নাম লেখানো, ছাত্র-জনতার অধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব—এসবই তাকে অন্য রকম করে গড়ে তুলেছে। সাধারণত ছাত্রনেতাদের সেই তারুণ্যই বড় রাজনৈতিক মঞ্চে নেওয়া হয়—তবে আখতারের কেসে আছে অনশন, প্রতিরোধ, এবং ‘চাপের মুখে না মাথা ঝুঁকানো’—এসব অভিজ্ঞতা এখন নির্বাচনী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হচ্ছে।
এনসিপি নেতারা বলছেন, ‘জাতীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন, সুশাসন ও জবাবদিহিতা’ প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য—তাই নির্বাচনী তালিকায় এমন কণ্ঠস্বরকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে, যারা মাঠে কাজ করেছে, জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে—এই কণ্ঠস্বর কি পারবে পুরনো রাজনৈতিক সঞ্চিত শক্তির সঙ্গে টিকিটপে প্রতিযোগিতা করতে? নাকি তারা কেবল বিদ্যুৎবেগে এক মুহূর্তের আবেগ উস্কে দেবে?
এই প্রতিবেদক কেবল নামের পেছনেই থাকা ঘটনাগুলো টেনে আনল না—আমি শহরের লোকগুলোকে শুনেছি, কলেজের শিক্ষককে দেখেছি, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের চাহনি দেখেছি। এখানে সবশেষে আসে নৈতিক প্রশ্ন: রাজনীতিতে ‘নতুনত্ব’ যখন বিক্রি হয়, তখন সেই নতুনত্বের ভেতর কতটা ধারাবাহিক আদর্শ থাকে? আন্দোলনের তেজ কি কেবল ভোটের আগ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ হবে, নাকি সংসদে বসেও সেটি জীবন্ত থাকবে? পাঠকের সামনে রেখেছি এই প্রশ্নগুলো—কারণ রাজনীতির বইগুলো অক্ষরে রচিত হওয়ার চেয়ে মানুষের জীবনে কী পরিবর্তন আনে, সেটাই মাপকাঠি।
রাজনীতির ইতিহাস স্মরণ করায়—কখনো কখনো ছোট্ট নোটিস, এক অপ্রিয় বন্ধুদের সমিতি, এক তরুণ নেতা—এসব মিলে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। আল-মামুন ও আখতারের কাহিনি এখনও শুধু শুরুর চিহ্ন। রংপুরের ভোটাররা এখন সিদ্ধান্ত নেবেন: তাদের অতীতভরিত রাজনৈতিক নিরাপত্তার দুর্গে নতুন কিছুকে প্রবেশ করতে দেবেন কি? নাকি পুরনো পরিচিত শক্তির কাছে ফিরে যাবেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ভোটের কক্ষেই—আর আমরা সেই ঘন্টার অপেক্ষায়।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক -শেখ তিতুমীর আকাশ।
বার্তা প্রধান : মোঃ সেলিম উদ্দিন
ইমেইল: dailyswadhinbhasha@gmail.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সকল স্বত্ব www.swadhinbhasha.com কর্তৃক সংরক্ষিত।