সাকিবুল স্যারের শাস্তি না দিলে আমরা তার ক্লাস করব না!

লোকমান ফারুক: রংপুর।
দুপুরের রোদ তখন নরম হয়ে এসেছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণচূড়া রোডে শত শত শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে আছে—কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, কারও গলায় ক্ষোভের স্লোগান। বাতাসে মিশে আছে উত্তপ্ত দাবি—"যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার চাই।"
রোদের আলোয় ঝলমল করছে ছাত্রছাত্রীদের চোখ, কিন্তু তাতে কোনো ভয় নেই—আছে প্রতিবাদের দীপ্তি।
সম্প্রতি দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. সাকিবুল ইসলাম এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. শামীম হোসাইনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন দুই নারী শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের টালবাহানায় ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার (১২ নভেম্বর) শিক্ষার্থীরা কৃষ্ণচূড়া রোডে মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধন শেষে মিছিলটি গিয়ে থামে মিডিয়া চত্বরে। সেখানে দাঁড়িয়ে এক শিক্ষার্থী কণ্ঠ উঁচিয়ে বলেন,
"আমরা প্রশাসনকে শেষবারের মতো সতর্ক করছি—মুলা ঝুলানো তদন্ত কমিটি আর নয়।' আমরা ন্যায়বিচার চাই, এখনই চাই।' আরেকজন যোগ করেন, "যদি যৌন নিপীড়নকারী সাকিবুল স্যারের শাস্তি না হয়, আমরা তার ক্লাসে আর পা রাখব না।"
চারপাশে তখন নিস্তব্ধতা। বাতাস যেন শুনছিল সেই কথাগুলো। হঠাৎই ভিড়ের ভেতর থেকে গর্জে উঠল একসুরে স্লোগান—"শিক্ষাঙ্গনে নিপীড়ন চলবে না, চলবে না!"
সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, এটা কেবল মানববন্ধন নয়—একটি প্রজন্মের নৈতিক প্রতিবাদ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রতিজ্ঞা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি কাজ করছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই উত্তর মানতে রাজি নয়। তাদের ভাষায়, 'কমিটি নয়, এখন দরকার সাহস—ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাহস।'
কৃষ্ণচূড়া গাছের পাতায় তখন হালকা হাওয়া বইছিল। মানববন্ধন শেষে ধীরে ধীরে ছত্রভঙ্গ হতে থাকা শিক্ষার্থীদের মুখে ক্লান্তি ছিল, কিন্তু চোখে দৃঢ়তা। সেই চোখের দৃঢ়তায় একটাই বার্তা—এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনো শিক্ষার্থী যেন ভয় নিয়ে ক্লাসে না যায়।
নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাদের এই প্রতিবাদ শুধু এক দিনের ঘটনা নয়—এটি একটি নৈতিক অবস্থান, যেখানে অন্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তরুণ প্রজন্ম বলছে,
"সত্যের পক্ষে, আমরা আর নীরব নই।"