বিশেষ প্রতিনিধি
মাহাবুব ইসলাম দোলন (৭৫) এবং হাসনা বগম (৭০) দম্পতির একমাত্র সন্তান হাসানুর রহমানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। প্রায় চারমাস আগে বৃদ্ধ বাবামাকে ঘর থেকে বের করে তালাবদ্ধ করে দিয়েছে নিজ পুত্র ও পুত্রবধূ মিলে। পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের ঝালিঙ্গি গ্রামে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,ওই গ্রামের মাহাবুব ইসলাম দোলন (৭৫) এবং হাসনা বগম (৭০) দম্পতি দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তারা বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় বাড়ীতে তেমন কোন কাজকর্ম ও আয়-রোজগার করতে না পারায় তাদের একমাত্র ছেলে হাসানুর ও তার স্ত্রী উম্মে মাহাবুবা সোমা দীর্ঘদিন যাবৎ তাদেরকে ভরণ-পোষণ এবং চিকিৎসার খরচ না দিয়ে মিথ্যা আশ্বাস এবং ভুল বুঝিয়ে সমস্ত জমি জমা লিখে নেয়ার পর ঘর হইতে বের করে দেয়ার পাঁয়তারা করে আসছে।
এক পর্যায়ে বিগত চার মাস আগে বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা বদ্ধ করে রাখে। এই ঘটনায় এলাকাবাসী মধ্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশের এক পর্যায়ে ৭ নভেম্বর শুক্রবার বাদ জুম্মা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় এলাকাবাসী মিলে বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়ির তালা ভেঙে তাদের রুমে রেখে আসে। এতে তাদের একমাত্র সন্তান হাসানুর ক্ষিপ্ত হয়ে দুপুরে তার স্ত্রীকে সাথে করে নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এবং ঘর থেকে বের করে দিয়ে পুনরায় তালা লাগিয়ে দেয়।
এমতাবস্থায় বৃদ্ধ দম্পতি পলাশবাড়ী থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর তাদের আসবাবপত্র ব্যবহারিক সরঞ্জামাদি বাড়ির বাহিরে ছাড়ানো ছিটানো অবস্থায় দেখতে পেলে হাউ মাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা।
এমন পরিস্থিতি দেখে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয় বৃদ্ধ দম্পতি সহ তাদের একমাত্র ছেলেকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসেন।
এ সময়ে মাহবুব ইসলাম দোলন জানায়, আমাদের ছেলে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ তার স্ত্রীর কথামতো কৌশল অবলম্বন করে আমাদের জমি জমা সমস্ত লিখে নিয়েছেন । আমাদের নানাভাবে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করে আসছেন। হাসনা বেগম জানান, আমাদের সন্তান তার স্ত্রীর কু পরামর্শে দীর্ঘদিন যাবত ভরণপোষণের দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত রেখেছেন।
ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার থানা এবং ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করার পরেও কোন সুরহা মেলেনি। আমরা তাদের রোষানলের শিকার হয়ে একাধিকবার বাড়ি ছাড়া হয়েছি। অতীতের যে কোন সময়ের ন্যায় গতকাল রাতেও আমাদের উপর শারীরিক নির্যাতন করে এবং তার বাবাকে বেধড়ক মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয় আমাদের।
এ ব্যাপারে ওই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলাম জানান,আমি এই বৃদ্ধ দম্পত্তির অভিযোগ ইতিপূর্বে ইউনিয়ন পরিষদে পাওয়ার পর তিনবার নোটিশ করেছি।
এতে বিবাদীর সাড়া না পাওয়ায় নিজেই স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বৃদ্ধ দম্পতিকে তাদের বসত ঘরে তালা ভেঙে রেখে এসেছি। এমন ঘটনায় ইতিপূর্বেও গাইবান্ধা কোর্টে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইনে মায়ের করা মামলা চলাকালীন সময়ে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করেন হাসানুর।
সেই সাথে বাবা মায়ের নামে শেখ জালিয়াতির মামলা সহ একাধিক মামলা করেন হাসানুর। পলাশবাড়ী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলফিকার আলী ভুট্টু জানান, বৃদ্ধ পিতা মাতাকে ঘর থেকে বের করে দেয়ায় ঐ এলাকায় উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম জনরোষ হতে অভিযুক্ত হাসানুরকে এবং বৃদ্ধ দম্পতিকে থানায় নিয়ে আসা হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সহযোগিতায় বৃদ্ধ দম্পতিকে ঘরে উঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।