জসিম তালুকদার, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম):
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোস্তাক আহমদ এই পরোয়ানা জারি করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা হলেন- কাজী মো. শহিদুল ইসলাম (২২), তৌহিদুল ইসলাম (৩০), ও আজম (২৫)। অপরদিকে জুবাইর নামে আরেক ধর্ষকের বয়স মামলার এজাহারে ১৭ বছর লেখার কারণে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা সম্ভব হয়নি।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১১ জুলাই বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতের কাথরিয়া হালিয়াপাড়া পয়েন্টের ঝাউবাগানে বাহারছড়া রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কাজী শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে গণধর্ষণ করা হয়। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী পিতৃহীন ও অসহায়।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী মামলা করতে থানায় গেলে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে এবং আসামিরা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে ওই ছাত্রী ছয়জনকে আসামি করে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলা করেন। আদালত অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
তদন্তে জানা যায়, বাহারছড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান কাজী মো. ইউসুফ তার ছোট ভাই কাজী মো. শহিদুল ইসলামকে আদমশুমারির দায়িত্ব দেন। শহিদুল এই সুযোগে একই ওয়ার্ডের ইলশা গ্রামের এক বিধবার মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে, যে কিনা বাহারছড়া-রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
১১ জুলাই, ২০২৪ তারিখে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে শহিদুল ওই ছাত্রীকে কাথরিয়া ইউনিয়নের হালিয়াপাড়া অংশে বঙ্গোপসাগরের ঝাউবাগানে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে শহিদুলের বন্ধু তৌহিদের মাছের খামার রয়েছে। শহিদুলের ডাকে তার আরও দুই বন্ধু আজম ও জোবাইর সেখানে আসে। তারা সবাই মিলে বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওই ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং তার কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে।
এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে প্রভাবশালীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। ধর্ষকরা ভুক্তভোগীকে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি দেয় এবং বাড়িতে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে লোক এনে ভয় দেখায়। থানায় গেলে ওই ছাত্রীর ক্ষতি হবে, ধর্ষকদের কিছুই হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দীন জানান, পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত আজ (বৃহস্পতিবার) তিন আসামির বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অপরদিকে মামলার এজাহারে জুবাইরের বয়স ১৭ বছর লেখার কারণে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পিবিআই এর প্রতিবেদনে তার সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবেন।